আগরতলা, ২৫ জানুয়ারী : জাতীয় ভোটার দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে। বুধবার ১৩তম জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানটি হয় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে। বছরের ভাবনা ‘ভোটের মত কিছুই নেই, ভোট আমরা দেব নিশ্চয়'। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা। আজকের এই অনুষ্ঠানে নতুন ভোটারদের সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র প্রদান, নির্বাচন সচেতনতা ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভোটের কাজে বিশেষ দায়িত্ব নির্বাহণের জন্য আধিকারিকদের সম্বর্ধনা, রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের সাথে যুক্ত ম্যাসকটের নাম, অবয়ব গঠনের সাথে যুক্তদের সংবর্ধনা, ওপেন ক্যুইজ প্রতিযোগিতা হয়।
জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে মজবুত করতে হলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সকল ভোটারের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। গণতন্ত্রে মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু মনভেদ হওয়া উচিত নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে বহির্রাজ্যের আধিকারিক সহ সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রচুর লোকের আগমন ঘটবে। এক্ষেত্রে তাদের সামনে রাজ্যের শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া তুলে ধরতে পারলে আগামী দিনে রাজ্যেরই সুনাম হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যনির্বাচনী আধিকারিক কিরণ গিত্যে বলেন, ভোটাররাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মেরুদন্ড। ভোটাররা নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে গণতন্ত্র মজবুত হয়। আমাদের দেশে ৯৪ কোটি ভোটার রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ভারতের নির্বাচন কমিশন চায় যেকোন নির্বাচনে সকল ভোটারদের সামগ্রিক অংশগ্রহণ। সারা বিশ্বে ভারতবর্ষের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটা আলাদা সম্মান রয়েছে। কিছুদিন পূর্বেও ১৭টি দেশকে তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন থেকে কর্মশালা করানো হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গ, ৮০ ঊর্ধ্ব এবং দিব্যাঙ্গজনদের আরও বেশী মাত্রায় ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করানোর লক্ষ্যে ও নাম নথিভুক্ত করানোর লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, ভোট কেন্দ্রে দিব্যাঙ্গজনদের জন্য র্যাম্প, হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা, ৮০ ঊর্ধ্বদের বাড়ি থেকে ভোট গ্রহণের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য রাজ্যের ১৭ বছর ও তদোর্ধ ১৭ হাজার যুবক-যুবতীর কাছ থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সি- ভিজিল অ্যাপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৬১০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৮০টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরও জানান, নো ইওর ক্যান্ডিডেট অ্যাপের মাধ্যমে যেকোন ভোটার নির্বাচনী প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহজেই অবহিত হতে পারবেন। রাজ্যের নির্বাচনী কাজের সঙ্গে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার লোক নিযুক্ত রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য এদের মধ্যে প্রত্যেককেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রাজ্যে গত নির্বাচনগুলির চাইতে এবছর এখন অবধি নির্বাচন পূর্ব সন্ত্রাস প্রায় ৫০ শতাংশ কম হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে আগামীদিনে রাজ্যে বিনিয়োগ, শিল্প এবং পর্যটনে বিপুল প্রসার ঘটবে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার এম এল দে। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দিব্যাঙ্গ সাতারু সমীর বর্মন।
0 মন্তব্যসমূহ