আগরতলা : কৃষি কাজ এখন আর শুধু খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি মানুষের বিনোদনের অন্যতম অংশ হয়ে উঠেছে। তাই তো এখন গৃহ ও বাগান সাজানোর জন্য নানা প্রজাতির গাছের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আবার খাদ্য শষ্যকেও এমন সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন করে সাজিয়ে তোলা হয়, যা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন। যেমন তাইওয়ান দেশে বিভিন্ন রঙের ধান লাগিয়ে মাঠকে সাজিয়ে তোলা হয় তা দেখতে লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর ভিড় জমান এমন সুন্দর সুন্দর ধানের মাঠ দেখতে। এইদৃষ্ট নন্দন মাঠ একদিকে পর্যটক টেনে দেশ বিদেশের মুদ্রার আমদানী করে আবার খাদ্য শষ্যেরও যোগান দেয়। একে বলা হয়
এগ্রোটুরিজম তথা কৃষি পর্যটন। সম্প্রতি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ধান ক্ষেতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান সরকার কৃষির উন্নতির পাশাপাশি পর্যটনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রকেও উন্নত করতে চাইছে। এর প্রেক্ষিতে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রথম এগ্রোটুরিজম তথা কৃষি পর্যটন কেন্দ্র গড় উঠছে আগরতলার পার্শবর্তী নাগিছড়ায়। এই এলাকার উদ্যান গবেষনা কেন্দ্রের রেড পাম অয়েল বাগানে গড়ে তোলার হবে এটি।
ভোজ্য তেলের মধ্যে জনপ্রিয় একটি হচ্ছে পাম তেল। বিশ্ব জুড়ে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও দিন দিন আম তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মূলত পাম গাছের ফল থেকে পাম তেল তৈরি করা হয়। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদার কথা চিন্তা করে হাজার ১৯৮১ সালে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তর এর অন্তর্গত উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালিত আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া এলাকার উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের প্রায় ২৫বিঘা জমিতে রেড অয়েল পাম গাছ লাগানো হয়ে ছিল। এই গাছগুলির এখন বিশাল আকার ধারণ করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আবহাওয়া ও জলবায়ু পাম গাছ চাষের যতেষ্ট উপযুক্ত তাই ত্রিপুরা রাজ্যে পাম গাছের বানিজ্যিক চাষ সম্ভব এবং প্রচুর পরিমাণে পামতেল উৎপাদন হবে। কিন্তু এরপরও ত্রিপুরা রাজ্যে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভাবে পামতেল উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি, এর কারণ হচ্ছে যেখানে পাম গাছের বাগান থাকবে তার আশেপাশের এলাকায় পাম ফল থেকে তেল প্রক্রিয়াকরণ করার একটি কারখানা থাকা জরুরি। কারণ পাকা ফল গাছ থেকে পাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব এগুলিকে প্রক্রিয়াকরণ করে তেল বের করে নিতে হয়। ফলের মধ্যে রস থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ পাম তেল পাওয়া যায় তা শুকিয়ে গেলে তেলের পরিমাণ কমে যায় তাই গাছ থেকে ফল পাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব এগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে নিতে হয়। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যে পাম তেল বের করার কোন কারখানা স্থাপিত হয়নি তাই বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ সফল হয়নি।
পাম চাষের অন্যতম আরো একটি শর্ত হচ্ছে জলসেচ। নিয়মিত গাছের গোড়ায় জল দিতে হয়। কিন্তু উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের এই প্লটে আগের জল সেচের ব্যবস্থা ছিল না। এরপরও গাছগুলি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং সুন্দর একটি প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই বাগান কে ঘিরে অ্যাগ্রো ট্যুরিজম কেন্দ্র স্থাপনের একটি দারুন সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে এই জায়গাটির উপযুক্ত ব্যবহার হবে, সরকারের বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে, আশেপাশের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত পাম গাছের বাগান বাস্তবিক অর্থে কাজে লাগবে।
0 মন্তব্যসমূহ