আগরতলা, ১২ ফেব্রুয়ারী: বাম কংগ্রেস এবং তিপ্রামথা হচ্ছে ত্রিপল ট্রাবলের গটবন্ধন, এই তিন বিপদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে ডাবল ইঞ্জন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে এবং মোদি ও মানিক সাহার হাত শক্ত করতে হবে। দ্বিতীয় দফায় ত্রিপুরা নির্বাচনী প্রচারে এসে এই মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরা রাজ্যের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করতে রবিবার দ্বিতীয় দফায় ত্রিপুরায় আসেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন বিশেষ বিমানে আগরতলা এসে পৌঁছান এবং গোমতী জেলার উদয়পুরে ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে পূজার দেন।
এদিন তিনি মোট তিনটি সভা এবং একটি রোড শো করেন। প্রথম সভাটি করেন ঊনকোটি জেলার কৈলাশহরে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বললেন, কমিউনিস্টরা দীর্ঘ বছর ত্রিপুরায় শাসনভার পরিচালনা করলেও সাধারণ মানুষের জন্য কোন কাজ করেনি। বিজেপির পাঁচ বছরেই শুধুমাত্র ত্রিপুরার উন্নয়ন হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহার হাত ধরে হচ্ছে। উন্নয়নের অর্থ শুধু এই নয় যে রাস্তাঘাট পাকা বাড়িতে এবং পরিকাঠামো তৈরি করা। জনজাতি, মহিলা যুব প্রজন্ম আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের কল্যাণে বিজেপি সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এরাজ্যের দীর্ঘ বছর বামফ্রন্ট সরকার থাকার পরও জনজাতিরদের কল্যাণে কোন কাজ করেনি, এখন জনজাতি নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর চেহারা হিসেবে দাঁড় করিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু এভাবে চালাকি করে ভোট পাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। রাজ্জাক চা চা শ্রমিক জনজাতি অংশের মানুষের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, বামফ্রন্ট সরকার তাদের জন্য কি কাজ করেছিল? বর্তমান বিজেপি সরকার তাদের জন্য ও পাঁচ লাখ টাকার স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করেছে। সেইসঙ্গে প্রতিটি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছে, রান্নার গ্যাসের সংযোগ দিয়েছে, শৌচালয় নির্মাণ করে দিয়েছে, চাল সরবরাহ করা হচ্ছে বিনামূল্যে, সেইসঙ্গে সবাইকে বিনামূল্যে কোভিড মহামারীর টিকা দেওয়া হয়েছে। মনিপুরী হোক বা জনজাতি অথবা চা বাগানী সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজের সকল স্তরের জন্য সমান উন্নয়নের ব্যবস্থা করেছে বিজেপি সরকার।
ত্রিপুরায় কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট নিজেদের মধ্যে নির্বাচনী জোট করেছে। তাদের এই জোট প্রমাণ করে দিয়েছে ইতিমধ্যে তারা বিজেপির কাছে হেরে গিয়েছে। একা বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয় আগে মেনে নিয়ে এই জোট করেছে, তারপরও তাদের হার নিশ্চিত। যে বামফ্রন্ট একসময় কংগ্রেস দলের কর্মী সমর্থকদের উপর অত্যাচার করত আজ তাদের সঙ্গেই কংগ্রেস ইলু ইলু অর্থাৎ আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ করছে। সেইসঙ্গে মথাকেও তাদের মোহরা বানিয়ে ফেলেছে। এরা হচ্ছে বাম কংগ্রেস এবং তিপ্রামথা হচ্ছে ত্রিপল ট্রাবলের গটবন্ধন, এই তিন বিপদের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে ডাবল ইঞ্জন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে হবে এবং মোদি ও মানিক সাহার হাত শক্ত করতে হবে। এরা সকলেই এক, তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এখানে দুর্নীতি করা, উন্নয়ন তাদের লক্ষণ নয়। যদি রাজ্যের উন্নয়ন করতে হয় তাহলে বিজেপিকে জয়ী করে মানিক সাহার হাত মজবুত করতে হবে। কংগ্রেস বামফ্রন্টের সঙ্গে চলে এসেছে এদিকে বিজেপি সরকার মাত্র পাঁচ বছরে এই রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। বিজেপি একদিকে যেমন রিয়াং শরণার্থীদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেছে, জঙ্গিসংগঠন এনএলএফটি সঙ্গে চুক্তি করে শান্তি ফিরিয়েছে। একই ভাবে আগামী পাঁচ বছর রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।
আগে ত্রিপুরা রাজ্যে পানীয় জলের সংযোগ থেকে চাকরি-বাকরি যেকোনো কাজের জন্য বামফ্রন্ট ক্যাডারদের কাছে যেতে হত। কিন্তু ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই অবস্থা থেকে রাজ্যবাসী মুক্তি পেয়েছিলেন। তাই আবার রাজ্যে যাতে ক্যাডার রাজ আসতে না পারে এই জন্য কাজ করার আহ্বান রাখেন তিনি। যদি ক্যাডারদের আসার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে গরিব মানুষের অর্থ তারা নিয়ে যাবেন। বিজেপি সরকার তো ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে গরিবদেরকে টাকা তাদের ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় রাজ্যে অপরাধের সংখ্যা ৩০শতাংশ কমেছে। শুধুমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যই নয় সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিজেপি বড় ভূমিকা নিয়েছে। এই অঞ্চলের নয় হাজারের বেশি জঙ্গি সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। নরেন্দ্র মোদির উত্তর পূর্বের উন্নয়নের জন্য দিনরাত কাজ করছেন বলেও দাবি করেন। মনিপুরী ভাষাকে প্রাথমিক শিক্ষায় যুক্ত করা হবে। রাজ্যের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে রাজ্য বাসের গড় আয় ৭০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে এক লাখ কুড়ি হাজার করা সম্ভব হয়েছে বর্তমান বিজেপি সরকারের সময়। বিজেপি সরকার আবার ক্ষমতায় এলে প্রতিটি গরিব পরিবারকে বছরে দুটি করে রান্নার সিলিন্ডার বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলেও অঙ্গীকার করেন অমিত শাহ। ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যের সকল গরীব মানুষদেরকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে, কলেজ ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হবে। পিএম কৃষাণ প্রকল্পে বর্তমানে যে ৬ হাজার টাকা করে বছরে এক একটি কৃষক পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে তা বৃদ্ধি করে আট হাজার টাকা করা হবে। রাবার বাঁশ চাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য ২০০০কোটি টাকার আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। কৈলাসহরের হীরাছড়া এলাকায় আরো একটি নতুন বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে।
শেষ সভাটি দ্বিতীয় সভাটি করেন সিপাহীজলা জেলার বিশ্রামগঞ্জ এলাকায়। সবশেষে আগরতলা একটি রোড শো'তে অংশ নেন।
0 মন্তব্যসমূহ