আগরতলা, ৪ ফেব্রুয়ারি: কংগ্রেস সিপিএম জোট নিয়ে ফের একবার বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। খুন, সন্ত্রাস ও উশৃঙ্খলতার দল সিপিএম এবং কংগ্রেস। জোট আমলের ঘটনার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে বাজিয়ে এত বছর রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় ছিল কমিউনিস্টরা। যাদের হাতে অজস্র কংগ্রেস কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন, খুন হয়েছেন, গৃহহীন হয়েছেন। তাদের সঙ্গেই জোট করেছে এই উশৃঙ্খল কংগ্রেস দল। আর তারা কিভাবে সেসকল সর্বস্ব হারা মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাইবেন সেটার জবাব চায় রাজ্যের মানুষ। শুক্রবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে গোমতী এবং দক্ষিণ জেলায় আয়োজিত পৃথক পৃথক জন সমাবেশে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে সিপিএম কংগ্রেসের অশুভ জোট নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আসন্ন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে দিন রাত একাকার করে দিয়েছেন রাজ্যের ডায়নামিক মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি যেমন নিজ বিধানসভা কেন্দ্র বড়দোয়ালি এলাকার ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন ঠিক তেমনি দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে আয়োজিত মিছিল মিটিং সমাবেশেও যোগ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শনিবার একযোগে তিনটি পৃথক জন সমাবেশে অংশগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিনের প্রথম জন সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয় ৩২ মাতাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের ভারতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থী অভিষেক দেবরায়ের সমর্থনে। মাতাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের গর্জি বাজারে আয়োজিত এই বিজয় সংকল্প জনসভার প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। পাশাপাশি সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপি প্রার্থী অভিষেক দেবরায়, মাতাবাড়ির বিদায়ী বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, যুব মোর্চার সভাপতি নবাদল বণিক সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যুবকদের কর্মসংস্থান আরো বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাম্প্রতিক বাজেটেও দক্ষতা বৃদ্ধির উপর অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নতি না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই লক্ষ্যে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অষ্টলক্ষ্মী হিসেবেও উত্তর পূর্বাঞ্চলকে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বিলোনিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী গৌতম সরকারের সমর্থনে। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় লাউগাং বাজারে অনুষ্ঠিত হয় এই বিজয় সংকল্প জনসভা। জনসভায় প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিলোনিয়ার বিদায়ী বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিক, প্রদেশ যুব মোর্চার সভাপতি নবাদল বনিক, বিজেপি প্রার্থী গৌতম সরকার সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন ইস্যুতে কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেস দলের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে সমাজবাদের কথা বলত, বর্তমানে তারাই সমাজের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। কল কারখানা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যদিও কমিউনিস্টরা এই রাজ্যে কথা শিল্প তৈরি করে দিয়ে গেছে। তারা নানাভাবে নানা কৌশলে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। কংগ্রেসকেও একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। জনসভা শেষে অনুষ্ঠীত হয় যোগদান সভা। এদিন এই সভা থেকে বিভিন্ন দল ছেড়ে ১৪ পরিবারের ৫৯ জন ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেন। তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে বরন করে নেন মুখ্যমন্ত্রী।
অপরদিকে একইদিনে বামফ্রন্টের খাস তালুক হিসাবে পরিচিত দক্ষিন জেলার ঋষ্যমুখ বিধানসভা কেন্দ্রে স্মরণীয় জন সমাবেশ করে ভারতীয় জনতা পার্টি। এই আসন থেকে বরাবরই জয়ী হয়ে এসেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী বাদল চৌধুরী। যদিও শারীরিক অসুস্থতার দরুণ এবার প্রার্থী হন নি তিনি। তাঁর জায়গায় কমিউনিস্ট মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অশোক মিত্র। আর বর্তমান শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন দিপায়ন চৌধুরী। তাই এই আসন বামেদের হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে কোথাও খামতি রাখতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। এই অবস্থায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে স্থানীয় জয়পুর স্কুল মাঠে বিজয় সংকল্প জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গকে একটা সময় ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে কমিউনিস্টরা। এখন বাকি রয়েছে কেরল। আর এবারের নির্বাচনে সিপিএম কংগ্রেস অশুভ আঁতাত করেছে। কিন্তু মানুষের কাছে কংগ্রেসও জিরো, সিপিএমও জিরো। জিরো প্লাস জিরো। এর যোগফল হবে শূন্য। আসন্ন নির্বাচনে মানুষই সেই প্রমাণ দেবেন। পাশাপাশি এদিন আঞ্চলিক দল তিপ্রা মথারও তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার জিগির তুলে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে রাজনীতি করছে তিপ্রা মথা দল। যদিও গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের মানচিত্র ঠিক করতে পারে নি তারা। এভাবেই মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা। উল্লেখ্য এদিন গোমতী ও দক্ষিণ জেলায় আয়োজিত পৃথক তিনটি জন সমাবেশে ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল বেশ নজরকাড়া।
0 মন্তব্যসমূহ