প্রতিটি নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে নির্বাচনের কাজে যুক্ত কর্মীরা তো আপনার বাম হাতের আঙুলে কালি লাগিয়ে দেন। আমরা সকলে জানি কেন হাতে এই কালি লাগানো হয়। কারণ সহজ, যাতে করে কেউ একাধিকবার ভোট দিতে না পারে। কিন্তু আপনার কি কখনো মনে হয়েছে এই কালি লাগানোর প্রক্রিয়াটি কবে শুরু হয়েছে, কোন সংস্থা এই কালি গুলো তৈরি করে এবং কেন এই কালি অন্য কালির চেয়ে আলাদা যে কারণে খুব সহজে আঙ্গুল থেকে মিটে যায় না? যদি না জেনে থাকেন তাহলে ভাবনা নেই, এই প্রতিবেদন আপনার এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে। নির্বাচন কমিশন ভোটে বিশেষ কালি নিয়ে আসার পেছনেও এক বিশেষ কারণ রয়েছে। ভারতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫১থেকে ১৯৫২সালের মধ্যে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ আসে যে অনেকেই একাধিকবার ভোট দিয়েছেন, আবার একে অন্যের ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তখন থেকে নির্বাচন কমিশন এমন বিশেষ কিছুর কথা চিন্তা করছিল যাতে করে ভোট দেওয়ার পর ওই ব্যক্তির মধ্যে এমন কিছু চিহ্ন দেওয়া হয় যাতে পরবর্তী সময় ভোট দিতে এলেই ভোটের কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা এই চিহ্ন দেখে ফেলেন এবং বুঝতে পারেন ওই ব্যক্তি আগেও ভোট দিয়েছেন। তাই নির্বাচন কমিশন ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বিশেষ ধরনের কালি উদ্ভাবনের প্রস্তাব দেয়। অনেক গবেষণার পর ১৯৬২ সালে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরী প্রথমবার এই কালের উদ্ভাবন করে। এরপর এই কালি উৎপাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাইসোর পেন্টস এন্ড ভার্নিস লিমিটেডকে। তারাই দেশের একমাত্র সংস্থা যারা এই কালি উৎপাদন করে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরবরাহ করে, এর জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে তাদেরকে বিশেষ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
লোকসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনেও এই কালি ব্যবহার করা হয়। সিলভার নাইট্রেট নামে এক বিশেষ রসায়ন দিয়ে এই কালি তৈরি করা হয়। যেগুলি সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সংস্পর্শে এলে বেগুনি রঙ ধারণ করে ও শরীরে লেগে যায়। হাতে লাগানোর মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে এগুলো শুকিয়ে যায়। যেগুলি চাইলেই মুছে নেওয়া যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে মুছে যায়। ১৯৬২ সাল থেকে এই কালি চলে আসছে তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এর বিকল্প হিসেবে অন্য ভালো কিছু উদ্ভাবন করতে পারেনি, তাই আরো দীর্ঘ বছর এই কালির প্রচলন ভোটের কাজে ব্যবহার করা হবে বলে অভিমত অনেকের।
0 মন্তব্যসমূহ