Advertisement

Responsive Advertisement

অল্প সময়েই সারা দেশের নজর কাড়ছে ললিত কলা একাডেমীর ত্রিপুরার রিজিওনাল সেন্টার

আগরতলা: আগরতলায় ললিত কলা একাডেমির আঞ্চলিক শাখা স্থাপন করায় রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের শিল্পীরা দারুন ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। রাজ্যের পাশাপাশি উত্তর- পূর্বাঞ্চল সহ দেশের অন্যান্য জায়গা থেকেও শিল্পীরা এখানে আসছেন।
ভারতীয় কলা সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রচারের উদ্দেশ্য ভারত সরকার ১৯৫৪ সালে ললিত কলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা করেছিল। এর প্রধান কার্যালয় দিল্লীর ফিরোজশাহ মার্গের রবীন্দ্র ভবনে অবস্থিত। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজ্যে শাখা রয়েছে। ভারত সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। একে সম্পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসনের মর্যদা দেওয়া হয়েছে। যাতে তারা স্বাধীনভাবে শিল্প ভাবনা নিয়ে চর্চা করতে পারে। ললিত কলা একাডেমি বিভিন্ন স্কলারশিপ ও সদস্য পদ দিয়ে থাকে। দেশর বিভিন্ন স্থানে এমন কি বিদেশেও কলা বিষয়ক প্রদর্শনী আয়োজন করে, সেই সঙ্গে একটি দ্বিভাষিক জার্ণালও প্রকাশ করে থাকে।
২৩ডিসেম্বর ২০১৮ইং ললিত কলা একাডেমির ত্রিপুরা রিজিয়ানেল সেন্টারের উদ্বোধন হয়। ভুবনেশ্বরে ললিতকলা একাডেমির সর্বশেষ সেন্টার চালু হয়েছিল, তার ৩৫ বছর পর ত্রিপুরা সেন্টার চালু করা হয়। সারা ভারতের মধ্যে ললিতকলা একাডেমির মোট ছয়টি রিজিওনাল সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের এই সেন্টারটি অন্যতম একটি। বাকি সেন্টারগুলি হল কলকাতা, ভুবনেশ্বর, লখনৌ, দিল্লি এবং চেন্নাই। 
এটি শুধু ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য নয় সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম একটি। এটি চালু হওয়ার পর ত্রিপুরাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের শিল্পীদের মধ্যে নতুন উদ্যম এবং শৈল্পিক ভাবনার সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন এক্সিকিউটিভ মেম্বার সুমন মজুমদার।
তিনি আরো বলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যেই সেন্টার ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে রাজ্যের ১৪৭শিল্পী আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরের কর্মশালায় অংশ নিয়েছে। এত সংখ্যক শিল্পীর সাফল্যের পিছনে এই সেন্টারের বড়সড় অবদান রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫ জন করে স্কলারশিপ শিল্পী কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, এরা রাজ্যের পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলসহ দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও আসছেন। ২০২২ সালে এই কেন্দ্রের স্কলারশিপ শিল্পীদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রামনাথ কোবিন্দের উপস্থিতিতে গৌহাটিতে শংকরদেব কলা ক্ষেত্রে স্বীকৃতি পত্র তুলে দেন জি কিষান রেড্ডি। এই ভর্তির সুযোগ পাওয়ার জন্য এখন প্রচুর সংখ্যক আবেদন আসছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের ২৫ জন স্টুডিও শিল্পী কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাকি যে পাঁচটি রিজিওনাল সেন্টার রয়েছে সেখানে মাত্র আট জন করে শিল্পীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়, আগরতলা সেন্টারটিই প্রথম যেখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫ জন করে শিল্পীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ সকল কারণে আগরতলা স্থল ললিত কলা একাডেমির রেজিয়ানেল সেন্টারটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
কলকাতার অনুভব মিত্র, এই সেন্টারের স্কাল্পচার বিভাগে স্কলারশিপ আর্টিস্ট। তিনি জানান এই সেন্টারে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছেন। কারণ এখানে কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। পাশাপাশি সহযোগী যে সকল শিল্পী রয়েছেন তাদের কাজ থেকে এবং প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন। মাসে দুটি শিল্পকর্ম করে প্রতিষ্ঠানের জমা দিতে হয় বলে জানান। স্কাল্পচার 
বিভাগে কাজ করছেন স্কলারশিপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন শান্তা দেব, এখানে কাজ করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ললিতকলা একাডেমি স্টুডিওতে কাজ করার স্বপ্ন প্রতিটি শিল্পীর মধ্যে থাকে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের শিল্পীরা দীর্ঘ বছর অপেক্ষার পর এমন একটি অভিজাত প্রতিষ্ঠান পেয়েছেন। এখানে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
শ্রাবণী রায় নামে আগরতলার চিত্রশিল্পী এখানে স্টুডিও আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন, তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, ললিত কলা একাডেমিতে কাজ করার জন্য তিনি কলকাতাসহ আরো কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছেন অবশেষে এখানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন। এই সেন্টারটি এখানে চালু হওয়ায় তার মতো অনেকেরই সুবিধা হয়েছে বলে জানান।
আসামের কোকড়াঝাড় এলাকার যুবক নয়নজ্যোতি বর্মন, সে কাগজ কাগজ কেটে কেটে নানা শিল্পকর্ম তৈরি করে। এক বছরের স্কলারশিপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে এখানে এসেছে। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সে জানায়, এখানে বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করা শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে নানা নতুন নতুন বিষয় তারা জানতে পারছেন একে অপরের কাছ থেকে। এই বিষয়গুলো তারা তাদের শিল্পকর্মে কাজে লাগাচ্ছেন।
রাজ্যের অন্যতম সুপরিচিত একজন চিত্রশিল্পী তপতী মজুমদার ভৌমিক। এই কেন্দ্র সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, আগরতলায় লালিত কলা একাডেমির রিজিওনাল সেন্টার চালু হওয়ায় স্থানীয় স্টুডিও আর্টিস্টদের অনেক সুবিধা হয়েছে। একজন শিল্পীকে যদি অন্য কোথাও কাজ করতে হতো তাহলে একটি ঘর ভাড়া নিতে হতো, যা অনেক বেশ সাপেক্ষ। কিন্তু এখানে স্টুডিওতে খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। এছাড়া একসঙ্গে অনেকজন শিল্পী কাজ করায় নিজেদের মধ্যে ভাবনার আদান-প্রদান হচ্ছে এবং অনেক দ্রুত নিজেদের কাজগুলো শেষ করা সম্ভব হচ্ছে। কাজের গুণগত মান অনেক ভালো হচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মহিলা শিল্পীদের লা ফ্যামে নামে একটি গোষ্ঠী রয়েছে। এইসব শিল্পীদের হাতে তৈরি শিল্পকর্ম ললিত কলা একাডেমির দিল্লির গ্যালারিতে প্রদর্শন করা হয়েছে এবং প্রচুর সংখ্যক বিক্রি হয়েছে হলে এ সকল শিল্পীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ