আগরতলা: ললিত কলার একাডেমির ত্রিপুরা রাজ্য আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ৭দিন ব্যাপি কাষ্ঠশিল্প বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো আগরতলায়। এই কর্মশালায় সারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৫১জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। সুদূর দক্ষিণের রাজ্য কেরালা, কর্ণাটক থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ইত্যাদি রাজ্য থেকে মোট ২০জন শিল্পী এসেছেন এবং ত্রিপুরা থেকে রয়েছেন ৩১জন শিল্পী, তারা সকলের গভর্নমেন্ট আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। তারা সেগুন, গামাইসহ নানা জাতের গাছের কাঠে তাদের শিল্প ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলেন অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।
চিত্রা নামের এক শিল্পী দক্ষিণের রাজ্য কেরালা থেকে এসেছেন, নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রথমেই তিনি ললিতকলা একাডেমীকে ধন্যবাদ জানান জাতীয় স্তরের এমন একটি কর্মশালায় তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। একসঙ্গে এতজন শিল্পী তাও আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন, তাদের এক একজনের চিন্তাধারা কাজের শৈলী সম্পূর্ণ ভিন্ন। এইসব ভিন্নতার মাঝে কাজ করার রোমাঞ্চই আলাদা। নিজের প্রতিভা তুলে ধরার পাশাপাশি অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন বলেও জানান তিনি।
মেঘালয় থেকে এসেছেন শিল্পী মারবর মারবানীঙ্গ। তিনি তার শিল্পকলার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে মেঘালয়ের এক মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা। যার সম্পর্কে ভারতের বেশিরভাগ মানুষই অবগত নন।
এই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী আগরতলার শিল্পী মুন্না আচার্য্য নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এই কর্মশালায় সারা ভারত থেকে অনেকে স্বনামধন্য শিল্পীরা অংশ নিয়েছেন। তাদের কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন কাঠ দিয়ে নানান সব নতুন শিল্পকর্ম তৈরি করার বিষয়ে। এই সকল শিল্পীদেরকে দেখে নিজেদের ভিতর যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে এগুলোকে আরো ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরো বলেন তার শিল্পকর্মের থিম হচ্ছে, একজন মানুষের চিন্তাভাবনার তালা খুলে যাচ্ছে এবং তিনি স্বাধীনতার সুন্দর দৃশ্য অনুভব করতে পারছেন।
পাশাপাশি এমন একটি জাতীয় স্তরের কর্মশালার আয়োজন করার জন্য ললিতলা একাডেমিকেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, এমন সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার জন্য। আগামী দিনে যাতে আরো বেশি করে এমন কর্মশালার আয়োজন করা হয় এবং আরো বেশি সংখ্যক শিল্পীরা নিজেদের চিন্তা ভাবনা তুলে ধরতে পারেন এই প্রত্যাশা রাখেন।
হিমাংশু দেবনাথ নামে ত্রিপুরা রাজ্যের আরো এক শিল্পী জানান, তার শিল্পকর্মটি তৈরি করেছেন একটি বুলেটের আদলে। তার অভিমত কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারতবাসী স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। এই আন্দোলনে বন্দুকের বুলেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই তিনি শিল্পকর্মের বুলেটকে তুলে ধরেছেন পাশাপাশি এর গায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিও ফুটিয়ে তুলেছেন।
শিল্পী রমেশ ম্যাগাড়িয়া কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে এই কর্মশালায় এসেছেন। তিনি তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন একজন মানুষ সাধারণ ভাবে ধর্মীয় ভাবে বিবেদ লক্ষ্য করে কিন্তু কেউ যদি গভীর ভাবে গীতার কুরআন অথবা বাইবেল পড়ে তাহলে বুঝতে পারে যে কোথাও কোন ভেদাভেদ নেই। তাই মানুষকে আরো বেশি গভীর ভাবে চিন্তা করার অবকাশ দিতে তিনি শিল্পকর্মটি তৈরি করছে। একই ছাদেরতলায় এভাবে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীদের এনে কর্মশালার আয়োজন করার জন্য ললিতলা একাডেমীকে ধন্যবাদ জানান। কর্মশালা শেষে তিনি কয়েকদিন ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে জানান।
ললিত কলা একাডেমীর সদস্য এবং ত্রিপুরা সেন্টারের প্রধান সুমন মজুমদার বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে প্রথম বারের মতো এতো বড় পরিষরে জাতীয় স্তরের কাষ্ঠ শিল্পের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে মোট ৫১জন শিল্পী অংশ নিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা এই কর্মশালায় অংশ নেওয়ায় নিজেদের চিন্তাভাবনা একে অপরের মধ্যে আদল প্রদান করতে পারছেন যার ফলে নিজেরা অনেক সমৃদ্ধ হচ্ছেন। শিল্পীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আগামী দিনের এধরনের কর্মসংহার আয়োজন করা হবে বলে জানান।
এ সকল শিল্পীদের হাতে তৈরি শিল্পকর্ম গুলিকে নিয়ে সাত দিনব্যাপী এক প্রদর্শনের আয়োজন করা হবে ললিত কলা একাডেমির প্রদর্শন কক্ষে, এই প্রদর্শনীতে সকলের আমন্ত্রণ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ