আগরতলা, ২০মার্চ ২০২৩ : রাজ্যে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। খেলোয়াড়দের প্রতিভা বিকাশে বর্তমানে রাজ্যে উন্নত ক্রীড়া পরিকাঠামো রয়েছে। শুধুমাত্র প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা ও উন্নত প্রশিক্ষণ। সেজন্য দরকার রাজ্যের কোচিং সেন্টারগুলির আরও উন্নিতকরণ এবং দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ। আজ সচিবালয়ের ২ নং কনফারেন্স হলে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরাতে জিমন্যাস্টিকস থেকে শুরু বেডমিন্টন, টেবিল টেনিস ইত্যাদি পরিকাঠামোগত ও উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এগুলির ব্যবহারিক দিকগুলির উপর আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে দপ্তরের আধিকারিকদের উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে ফিল্ড পরিদর্শনের উপর জোড় দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা স্পোর্টস অ্যাক্টকে সংশোধন করে আরও শক্তিশালী করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
পর্যালোচনা সভায় যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী বলেন, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর রাজ্যের ক্রীড়া ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রতিবছর ব্লক স্তর থেকে জেলা স্তরে এবং রাজ্য স্তরে বিভিন্ন বিভাগে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। তিনি বলেন, গত পাচ বছরে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ বছরে বিভিন্ন বিভাগ মিলিয়ে গ্রামস্তর থেকে রাজ্যস্তরে মোট ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭১১ জন ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেছে। ন্যাশনাল স্কুল গেমসে গত পাঁচ বছরে স্বর্ণপদক পেয়েছে ১৫ জন, রৌপ্য পদক পেয়েছে ১১ জন এবং ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে ১৭ জন। খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে স্বর্ণপদক পেয়েছে ৭ জন, রৌপ্য পদক পেয়েছে ৫ জন এবং ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে ৭ জন। উত্তর পূর্বাঞ্চল আঞ্চলিক ক্রীড়া সপ্তাহে রৌপ্য পদক অর্জন করেছে ১ জন এবং ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে ২ জন। তিনি বলেন রাজ্যের ২০৬টি কোচিং সেন্টারের মধ্যে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৯ হাজার ৫১৪ জন এবং এগুলিতে মোট শারীর শিক্ষক রয়েছে ৪৯৪ জন। কোচিং সেন্টারগুলিতে ১৮টি বিভিন্ন বিভাগে খোলোয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোচিং সেন্টারগুলির উন্নিতকরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রয়োজনে বাইরে থেকে সাই কোচ আনার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন এবং শারীর শিক্ষকদের আরও দক্ষ করে তোলার জন্য উদ্যোগী হতে বলেন। এছাড়াও সচিব রাজ্য ভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা, রাজ্য ভিত্তিক ভারতীয়ম প্রোগ্রাম, সিকিমে আয়োজিত ইয়ুধ কনক্লেভ, উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুব উৎসব, আবাসিক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়েও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, উদয়পুরের চন্দ্রপুরে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিন্থেটিক ফুটবল ট্রাফ তৈরি করা হয়েছে। উমাকান্ত মিনি স্টেডিয়ামে ২০ কোটি টাকার ব্যয়ে সিন্থেটিক ফুটবল ট্রাফ তৈরি করা হয়েছে। আগরতলা এনএসআরসিসি-তে মাল্টিপারপাস স্পোর্টস হল এবং ব্যাডমিন্টনের হল তৈরি করা হয়েছে।
যার জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি টাকার উপর। পানিসাগরে একটি সুইমিংপুল, ১০০ শয্যা সম্পন্ন পুরুষদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও আগামীতে বাধারঘাটে সিন্থেটিক হকি ট্রাফ, পানিসাগরে সিন্থেটিক অ্যাথলেটিক ট্রেক, উমাকান্ত মিনি স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট বসানো, জম্পুইজলায় সিন্থেটিক ফুটবল ট্রাফ তৈরি সহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরেন। যা আগামীতে সম্পন্ন করা হবে। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওপেন জিমকে আরও উন্নিতকরণ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও সচিব দপ্তরের স্কাউট এবং গাইড, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, এনএসএস কার্যক্রম, ক্রীড়া প্রতিভা বৃত্তি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগীতার উদ্যোগ, ক্রীড়া ব্যাক্তিদের জন্য চিকিৎসা বীমার উদ্যোগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়াও আগামী পাঁচ বছরে দপ্তরের বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন।
পর্যালোচনা সভায় যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, আগামীতে রাজ্যের ক্লাবগুলিকে ক্রীড়া ক্ষেত্রের উন্নতির স্বার্থে আরও কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ে দপ্তরকে উদ্যোগী হতে হবে। শারীর শিক্ষকদের নিজ কর্তব্যের প্রতি আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলিকে সংযোগ স্থাপন করার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। এতে আরও বেশী ক্রীড়া প্রতিভা উঠে আসা সম্ভবপর হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যে সমস্ত ক্লাবগুলিকে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা তা খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, মুখ্যমন্ত্রীর ওএসডি পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জি, দপ্তরের অধিকর্তা ছাড়াও দপ্তরের বিভিন্ন জেলার আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ