আগরতলা, ২৬ মার্চ: রক্তদানের কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র রক্তদানের মাধ্যমে একজন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ বাঁচানো যায়। চক্ষুদান, মরনোত্তর দেহদান, লিভার দান, কিডনি দান, বস্ত্রদান, শিক্ষাদান ইত্যাদি করা যায়। কিন্তু রক্তদান এমন একটি দান যার কোন তুলনা নেই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের কিছুটা স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল। তাই এই ঘাটতি পূরণে রাজ্যবাসীর কাছে আহ্বান রেখেছিলাম। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ক্লাব, সংস্থা, সংগঠন স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে আসছে। এজন্য তাদের সকলকে বিশেষ ধন্যবাদ। রবিবার রাজধানী আগরতলায় একাধিক স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
এদিন প্রথমে বিলোনিয়া টুগেদারনেসের উদ্যোগে আগরতলার কৃষ্ণনগর টিআরটিসি কমপ্লেক্সে এক মেগা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস সি দাস, টিআরটিসির চেয়ারম্যান অভিজিৎ দেব, ভাইস চেয়ারম্যান সমর রায় প্রমুখ। উদ্বোধকের বক্তব্যে শিবিরে রক্তদানে অংশ নেওয়া রক্তদাতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্বেচ্ছা রক্তদানে আরো বেশি করে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রক্তের কোন ধর্ম বর্ণ বা জাত নেই। তাই তো রক্তদানকে মহৎ দান হিসেবে গণ্য করা হয়।
দিনের দ্বিতীয় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় আগরতলা প্রেস ক্লাব সংলগ্ন আইএমএ হাউজে। রোটারেক্ট ক্লাব অফ আগরতলা সেন্ট্রাল-এর উদ্যোগে এবং ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন ত্রিপুরা শাখার সহায়তায় আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ, আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তা সহ অন্যান্যরা। শিবিরের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা বলেন, নির্বাচনের কারনে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের সামান্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বর্তমানে সকল অংশের মানুষ স্বেচ্ছা রক্তদানে এগিয়ে আসার কারণে রক্তের সঙ্কট দূর করা অনেকটা সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ ভগবানের সৃষ্টি। মানব দেহে রক্তের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। এক ইউনিট রক্ত মানুষের জীবন রক্ষায় অমূল্য ভূমিকা পালন করে। রক্তদানের মতো মহৎ দান আর কিছু হয় না। রক্তদানের পাশাপাশি নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার জন্যও সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এরপর লায়ন্স ক্লাব, আগরতলার উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, লায়ন্স ক্লাবের ডা: সুনীল ধর সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশেষ কোন শারীরিক অসুবিধা না থাকলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তিই প্রতি তিন মাস অন্তর রক্তদান করতে পারেন। রক্তদানের চাইতে মহৎ দান কিছুই নেই। মানুষের দান করা রক্তে জীবন ফিরে পেতে পারেন বহু মুমূর্ষু রোগী। তাই রক্তদানের এই মহতী উদ্দেশ্যকে সফল করতে স্বেচ্ছা রক্তদাতা ও উদ্যোক্তাদের সাধুবাদ জানান তিনি।
এই কর্মসূচি সেরে দলীয় কার্যকর্তাদের নিয়ে নেতাজী স্কুলে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'মন কি বাত' শুনেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা, বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য্য, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা। পরে সেখানে ৮ টাউন বড়দোয়ালি মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এতে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, বিধায়ক স্বপ্না দাস পাল, পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, মণ্ডল সভাপতি সঞ্জয় সাহা, সদর আরবান জেলা সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যগণ।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী স্বেচ্ছা রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই রক্তদান কর্মসূচি সেটা ব্যাখ্যা করেন তিনি। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা অভিযোগ আসছে। দীর্ঘ দিনের চাঁদাবাজি সংস্কৃতি ফের অনেকের মধ্যে এসে গিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল ও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা এধরণের চাঁদাবাজি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের হৃদয়ের কথা বলে। এর বাইরে অন্য দলকে নিয়ে কেন চিন্তা করতে হবে? অন্য দলের দ্বারা কেন প্রভাবিত হবে মানুষ? বিচ্যুতির ঘটনা ঠিক নয়। যারা চলে আসছি আসছি বলে প্রচার করেছিল তাদের দ্বারা কোনভাবেই প্রভাবিত হলে চলবে না। এসব দুঃখজনক ঘটনা। যারা মানুষের জন্য কোন কাজই করেনি দেখা গেল তাদের কথা কিছু মানুষ শুনছে। আর বিজেপি দল সব সময় মানুষের পাশে থেকেও দলের একাংশ কার্যকর্তার মধ্যে সেই স্থিরতা কেন থাকবে না? এই বিষয়ে চর্চা করা প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বাসের উপর ভর করেই চলতে হবে। কোন অবস্থায় বিশ্বাস হারালে চলবে না। কার্যকর্তাদের এক্ষেত্রে ভূমিকা অপরিসীম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগন রক্তদাতাদের উৎসাহ প্রদান করেন। সবগুলি রক্তদান শিবিরে এদিন বহু রক্তদাতা স্বেচ্ছা রক্তদান করে সামাজিক দায়বদ্ধতার নজির রাখেন। সেই সঙ্গে এদিন রামনগরের বিধায়ক সুরজিত দত্তের বাসভবনে আয়োজিত মেগা রক্তদান শিবিরে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি ৭ রামনগর মন্ডলের উদ্যোগে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুরজিৎ দত্ত, পুর নিগমের কাউন্সিলার অভিষেক দত্ত সহ অন্যান্যরা।
0 মন্তব্যসমূহ