Advertisement

Responsive Advertisement

আগরতলায় অমিত শাহ ও প্রদ্যুতের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো

আগরতলা, ৮ মার্চ: শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিপ্রামথা দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে অমিত শাহ এবং প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মনের মধ্যে আগরতলাতে আরো এক দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উভয় দলের নেতৃত্ব'র মধ্যে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস লক্ষ্য করা যায়। 
বুধবার রাজধানী আগরতলা আস্তাবল ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা সহ মন্ত্রিসভার মোট নয়জন সদস্য শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সরকার ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
শপথ গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি চলে যায়। অপরদিকে অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা গোমতী জেলার উদয়পুরে যান ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দরে পূজা দেওয়ার জন্য। তারা একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে চড়ে উদয়পুরে যান এবং পূজা শেষে আবার আগরতলায় ফিরে আসেন। আগরতলা এসে রাজ্য অতিথিশালায় বৈঠক করেন। অতিথিশালায় আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তিপ্রামথার চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মন, তাদের দলের বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা, বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা, বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা, বিধায়ক অনিমেষ দেববর্মাসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে বিজেপির তরফে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহা, অসম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড হিমন্ত বিশ্বশর্মা, বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্রসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
তাদের এই বৈঠক দীর্ঘ প্রায় দুই ঘন্টা ধরে চলে। এই বৈঠক শেষে সম্বিত পাত্র সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, শপথ গ্রহণের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী ডা মানিক সাহা, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বাস শর্মা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরে গিয়ে রাজ্যবাসীর কল্যাণে পূজা দেন। এরপর আগরতলায় ফিরে এসে নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আইপিএফটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত এন সি দেববর্মার মেয়ে নেত্রী জয়ন্তী দেববর্মা, বিজেপি সহসভাপতি পাতালকন্যা জমাতিয়াও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কিভাবে বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট রাজ্যের সাধারণ মানুষের কল্যাণ বেশি করে কাজ করতে পারে এই বিষয় নিয়ে। বিশেষ করে এই দুই নেত্রী যাতে আরো ভালোভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন তাই বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই দুইজন এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে তারা পরাজিত হয়েছে। তাদেরকে আরো ভালোভাবে কাজের সুবিধা করে দিতে তাদের কোন বোর্ডে এমওএস করে দেওয়া হবে।
এর পাশাপাশি তিপ্রামথা দলের চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনসহ দলের অন্যান্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এই বৈঠকে রাজ্যের জনজাতীয় অংশের মানুষের অবস্থা উন্নতির বিষয়, কি করে তাদের সমস্যার সমাধান করা যায়, জনজাতি অংশের মানুষের সম্মানকে তুলে ধরার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে সকলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে বিজেপি আইপিএফটির পাশাপাশি সকল সামাজিক সংস্থা এবং তিপ্রামথা মিলে উন্নয়নের কাজ করবে। এই বিষয়গুলি নিয়ে আগামী দিনে নিয়মিত ভাবে একাধিক ধাপে আলোচনা করা হবে ও সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করা হবে। এই সমাধান একই স্লোগানকে সামনে রেখে করা হবে তা হলো, সব কা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস।
এই বৈঠকে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড গঠনের বিষয় নিয়ে কি কোন আলোচনা হয়েছে? তা জানতে চাইলে তিনি বলেন কোন দাবিদাবা নিয়ে এদিন আলোচনা হয়নি। এমনকি উভয় দলের মধ্যে কেউ কোন দাবির বিষয়ে প্রস্তাব আনেনি বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি।
পরে আলোচনা হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মনকে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মনকে বৈঠকের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তাদের দাবি সাংবিধানিক সমাধানের বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেছেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত তিনি পরবর্তী সময়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাবেন।
পরবর্তী সময় উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রদ্যুৎ কিশোর বলেন, রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এদিন তাদের আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে উপস্থিত নেতৃত্বদের সামনে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। তাদের কথা শোনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ত্রিপুরা রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সম্মতি প্রকাশ করেছেন। এই বিষয়ে আরো গভীরভাবে একজন বিশেষ আধিকারিককে নিযুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। নির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে বলেও তাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তার এই আশ্বাসের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তারা ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলল জানান প্রদ্যুৎ কিশোর দেব বর্মন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন এই কেবিনেটে তাদের কোন সদস্য থাকবে না। অনেকদিন পর প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মনকে অনেকটা রিলাক্স মোডে দেখা গেল। তার এই চেহারা দেখে অনেকের অভিমত অবশেষে উভয় দলের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস এসেছে। যার বহিঃপ্রকাশ প্রদ্যুৎ কিশোরের চেহারায় ঝলকিত হচ্ছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ