Advertisement

Responsive Advertisement

হোমিওপ্যাথিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ে আয়ুষ কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন কর্মসুচী


আগরতলা, ২৯ এপ্রিল: হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যেমন কার্যকরী, গুণে ভরপুর তেমনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। হোমিওপ্যাথি- নিরাপদ এবং উপশমকারী। হোমিওপ্যাথি হলো একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এর সুবিধা গ্রহণ করছেন। মা ও শিশুর হোমিওপ্যাথিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ে আয়ুষ কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের নিয়ে রাজ্য ভিত্তিক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম আগামী ৪ঠা মে ২০২৩, রবীন্দ্র ভবন হল নম্বর ২ এ অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা: মানিক সাহা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
শিশু, বয়ষ্ক-যে কোন বয়সের মানুষের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিশেভাবে ফলপ্রদ। বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি বিশেষ জনপ্রিয়। গর্ভকালীন সমস্যাগুলি যথাসময়ে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং উপশমকারী চিকিৎসা। মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রয়োজনে গর্ভাবস্থা এবং শিশুর মাতৃদুগ্ধ চলাকালীন সময়ে সাধারণত মায়েদের কড়া ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে। তাই হোমিওপ্যাথি গর্ভাবস্থার সময় এবং গর্ভাবস্থার পর- উভয়ক্ষেত্রে-ই মায়ের জন্য সর্বোত্তম পছন্দ। সর্দি কাশির মতো সাধারণ রোগ হোক কিংবা ক্যান্সার, কিডনি জনিত জটিল রোগ- সবক্ষেত্রেই হোমিওপ্যাথি ভীষণ ভাবে কার্যকরী।

ভারতেও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের মতো ত্রিপুরাতেও এই পদ্ধতির প্রসার এবং প্রচারে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার পরিকাঠামো রয়েছে। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব। এতে রাজ্য আয়ুষ মিশন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। রাজ্যের অধিকাংশ হাসপাতালেই আয়ুষ পরিষেবার অন্তর্গত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্য হোমিওপ্যাথি হাসপাতাল অর্থাৎ নেতাজী সুভাষ স্টেট হোমিওপ্যাথি হাসপাতালে আইপি ডি-র ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া গোমতী এবং ঊনকোটি জেলায় ইন্টিগ্রেটেড আয়ুষ হাসপাতাল রয়েছে। অবিলম্বে সারুমেও আয়ুষ হাসপাতালের সূচনা হবে। রাজ্যের সমস্ত জেলার বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি বেশ কিছু হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।গোমতী, উত্তর ত্রিপুরা, সিপাহীজলা এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৩৭ টি আয়ুষ হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার রয়েছে যেখানে হোমিওপ্যাথি পরিষেবা প্রদান করা হয়। ভবিষ্যতে রাজ্যের সবকটি জেলাতে আরও ৪৬ টি আয়ুষ হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পরিষেবায় নিজেদের কৃতিত্বের সাক্ষ্য রেখে গেছেন এমন ৫ জন অবসরপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের সম্মান জানানো হবে। বছরের পর বছর রোগীদের যত্নের সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের স্বনামধন্য চিকিৎসক ডা: দেবব্রত ভারতী। তার এই বিশিষ্ট অবদানের জন্য এদিন ডা: দেবব্রত ভারতী মহাশয়কে লাইফ টাইম এচিভমেন্ট সম্মানে সম্মানিত করা হবে। সেইসঙ্গে গ্রামেগঞ্জে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবাকে প্রসারিত করার জন্য রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: রেখা সরকার, ডা: অপরাজিতা সরকার, ডা: প্রশান্ত দে এবং ডা: দেবাশীষ ভট্টাচাৰ্য্যকে স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশংসাপত্র প্রদান করা হবে।
এদিন রাজ্যের হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা বিষয়ক একটি তথ্যচিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে।
থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, সিকেল সেল অ্যানিমিয়া ইত্যাদি রক্ত সংক্রান্ত রোগ সমূহ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য ৪ঠা মে রবীন্দ্রভবনে মাননীয় মুখ্যামন্ত্রীর হাত ধরে প্রকাশিত হবে এক পুস্তিকা।
এই পুস্তিকার মাধ্যমে জাতীয় ব্লাড সেলের আওতাধীন প্রকল্প এবং সঠিক সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করে জীন গঠিত রক্ত রোগের প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা হবে। রক্ত উপাদানগুলির পৃথকীকরণের মাধ্যমে এবং রক্ত গঠিত বিভিন্ন রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধ সমূহ বিনামূল্যে প্রদানের মাধ্যমে এই ধরণের রোগের চিকিৎসাকে সহজলভ্য করতে রাজ্য সরকার যে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছেন, পুস্তিকাতে তারও তথ্য সন্নিবিষ্ট থাকবে।
হাম - রুবেলা রোগের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি তথ্যচিত্র এদিন অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হবে । হাম একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ এবং শিশুদের বিকলাঙ্গতা বা মৃত্যুর একটি বড় কারণ। রুবেলা একটি ভাইরাস ঘটিত সংক্রামক রোগ। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রুবেলা সংক্রমণ হলে ফলস্বরূপ জন্মগত রুবেলা সিনড্রোম হতে পারে, যা ভুণ এবং নবজাতকের জন্য মারাত্মক এমনকি প্রাণনাশকও হতে পারে। জ্বর এবং ম্যাকুলোপ্যাপুলার র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি সহ যেকোনও রোগীকে হাম-রুবেলা রোগে সন্দেহ করা হয়। হাম-রুবেলা রোগ প্রতিহত করতে হাম-রুবেলা টীকার ডোজ দেওয়া হয়। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে হাম-রুবেলা রোগ সনাক্ত করতে বাড়ি বাড়ি অ্যাক্টিভ কেইস অনুসন্ধান করা হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হবে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১০০% পূর্ণ টীকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা, গোমতী এবং ধলাই জেলাকে অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হবে।
ন্যাশনাল কুয়ালিটি অ্যাসুরেন্স প্রোগ্রামের অন্তর্গত কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৪ঠা মে রাজ্যের ৬ টি হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার- চানপুর, মাধবনগর, দশরথদেব, পশ্চিম হরিণা, একিনপুর, কালাপানিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মধ্যপ্রতাপগড় আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিকে ন্যাশনাল কুয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের মান্যতার নিরিখে পুরস্কৃত করা হবে। ন্যাশনাল কুয়ালিটি অ্যাসুরেন্স প্রোগ্রামের আরেকটি প্রকল্প হলো কায়াকল্প। এই প্রকল্পে যে সকল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের অধিকারী হয়েছে তাদের এদিন রাজ্যস্তরে পুরস্কৃত করা হবে। ধলাই জেলা হাসপাতাল, দক্ষিণ জেলার মনুবাজার সামাজিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গোমতী জেলার তুলামুড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পশ্চিম জেলার চানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেরা হাসপাতালের শিরোপা পাবে।
৪ঠা মে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধেনের পর মা ও শিশুর হোমিওপ্যাথিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ে আয়ুষ কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রেস রিলিজে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ