Advertisement

Responsive Advertisement

সাধারণ চাষি হরিমোহন শর্মার উদ্ভাবিত জাতের আপেল উষ্ণ অঞ্চলেও চাষ হচ্ছে

আগে একটা সময় ছিলো আপেল গাছের কথা মনে এলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে ঠান্ডা ও বরফের জমাট বাধা কাশ্মীর অথবা হিমাচল প্রদেশের মত ঠান্ডা জায়গার ছবি। যে সকল এলাকায় গ্রাষ্মকালেও শীত অনুভূত হয়। কিন্তু শীতের এই ফলকে এখন প্রচন্ড গরম এলাকাতেও চাষ হচ্ছে আপেল। 
গরম অঞ্চলে যে প্রজাতির আপেল চাষ করছে তার নাম HRMN-99। এই আপেলের প্রজাতিও কোন গবেষনাগারে বিশাল বড় মাপের কৃষি গবেষক গবেষনা করে উদ্ভাবন করেননি। এই প্রজাতির আপেল উদ্ভাবন করেছেন একজন সাধারন কৃষক হরিমোহন শর্মা। তার নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে HRMN-99। হিমাচল প্রদেশের বিলাশপুর এলাকার অতি সাধারণ এবং কৌতুহলী কৃষক হরিমোহন শর্মা এমন অদ্ভত প্রজাতির আপেল উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত প্রজাতির আপেল গাছ এখন দেশের প্রায় প্রতিটি কোনায় পৌঁছে গিয়েছে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের চেয়েও গরম এলাকায় ফল ধরছে। তার এই কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে একাধীক সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। তার জন্ম ৪এপ্রিল ১৯৫৬সালে পানিয়ালা গ্রামে হয়েছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য দশম শ্রেণীতে উঠার পর পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে রোজগারে লেগে পড়তে হয়। ১০৯৯৮সালে তিনি দোকান থেকে আপেল কিনে এনে ছিলেন। আপেল খাওয়ার পর এর বীজ গুলি কৌতুহল বসত ঘরের পেছনে লাগিয়েদেন এবং কিছু দিন পর দেখেন বীজ গুলি থেকে একটি গাছ জন্ম নিয়েছে। তখন তিনি এই গাছ গুলিকে যত্ন করেন। গাছ বড় হতে থাকে এবং ২০০১সালে এই গাছে প্রথম কিছু ফলন হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮শ'ফুট উচু গরম জায়গায় ফল ধরায় তিনি খুব খুশী হন। কিন্তু ফল তুলনামূলক ভাবে অনেক ছুট হয়। তাই তিনি পরবর্তী সময় গ্রাফটিং করার জন্য এই এলাকায় অন্য কোন আপেল গাছ ছিলো না তাই তিনি এই গাছের ডালকে প্লাম গাছের সঙ্গে গ্রাফট করেন। এভাবে নিজের জমিতে ১৩০টি গাছে গ্রাফট করেন এবং সফল হন সুন্দর ও বড় আকালের আপেল ধরে গাছ গুলিতে। হরিমোহনের এই গাছ গুলি এখনো ফল দিচ্ছে। এরপর নিজের মত করে আরো পরিক্ষা-নিরিক্ষা চালান গাছ গুলি নিয়ে এবং ২০০৬সালে প্রথম সাধারণ মানুষের প্রচুর পরিমানে আপেল চারা উৎপাদন করেন। পরম্পরাগত শীত প্রধান অঞ্চলের আপেল গাছে এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে অপর দিকে HRMN-99 প্রজাতির গাছে ফেব্রুয়ারী মাসেই ফুল চলে আসে এবং জুন থেকে জুলাই মাসে ফল পেকে যায়। প্রথম অবস্থায় কর্ণাটক, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের মত গরম তাপযুক্ত রাজ্য পরিক্ষা মূলক ভাবে এর চাষ করেন। তার এই প্রজাতির গাছ দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনেও লাগনো হয়েছ এবং ফল ধরছে। তার এই কাজ ফল স্বরূপ তিনি রাষ্ট্রতি পুরস্কার পেয়েছেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখ্যার্জীর হাত থেকে তিনি এই পুরস্কার নেন ২০১৭সালে। সারাদেশে তার উৎপাদিত ৩ লাখের বেশী চারা সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তার উদ্ভাবিত এই প্রজাতি শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ নয় বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিল, আফগানাস্থান, রাশিয়া এমন কি ইন্দোনেশিয়া ও জার্মানিতেও পাঠানো হয়েছে। মূলত গরম জলয়বায়ু যুক্ত এলাকায় কি করে চাষ করতে হয় এই বিষয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। 
ত্রিপুরার মাটিতে এই প্রজাতির ফলিয়ে সবাইকে অবাক করেছেন আগরতলার পার্শবর্তী বামুটিয়া এলাকার যুবক মিঠুন সরকার। ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অন্তর্গত উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষন বিভাগ এই প্রজাতির আপের পরিক্ষা মূলক চাষ করছে। পর পর তিন বছর চাষের ফল এলে তার নিশ্চিত হবেন যে এই আবহাওয়াতে আপেল চাষ বাণিজ্যিক ভাবে কতটুকু লাভ জনক। এরপর সরকার কৃষিকদের এই আপেল চাষে কি ধরনের সহায়তা করা যায় এই বিষয়ে পরিকল্পনা নেবে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ