আগরতলা: এবছর গ্রীষ্মের শুরুতেই রাজ্যের তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। দীর্ঘ বছরের পুরাতন রেকর্ড ভেঙ্গে এবছর গ্রীষ্মের রাজ্যের তাপমাত্রা পৌঁচেছে ৪১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে। তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করছে।
তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব থেকে মুক্ত নয় রাজ্য সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ প্রাণীরা। গরমে নাজেহাল খাঁচায় বন্দি পশুরাজ থেকে শুরু করে ভাল্লুক এমন কি পাখিরাও। এই পরিস্থিতিতে এ সকল প্রাণীদের তীব্র গরমের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যের একমাত্র চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের এই চেষ্টার ফলে প্রাণীগুলি অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে। চিড়িয়াখানায় দেখা গেল কর্মীরা খাঁচার বাইরে থেকে সিংহের শরীরে জল ছিটিয়ে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। একজনের ঝাপটা পেতে সিংহ খাঁচার ভেতর থেকে বনকর্মীর দিকে ছোটে আসছে এবং জল ছিটানোকে উপভোগ করছে। বনকর্মীরা জানান সূর্য মাথার উপর ওঠার আগে খেয়ে দেয়ে জলহস্তীরা জলে নেমে পড়ে, সারা দুপুর জলে কাটিয়ে বিকেলে জল থেকে আবার উঠে। প্রাণীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তাই সকাল বিকাল খাবার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা বন কর্মীরা। যাতে প্রাণীগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেয়ে নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে তাদের সুবিধামতো জায়গায় সময় কাটাতে পারে।
চিড়িয়াখানার আধিকারিক চিরঞ্জীব দেবনাথ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর গরমের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি। এই পরিস্থিতিতে প্রাণীগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে তাদের।
তিনি আরো বলেন, জঙ্গলে যে সকল প্রাণীরা থাকে তারা বেশি গরম বা ঠান্ডা লাগলে এদিক ওদিক ঘুরে সহনশীল পরিবেশে চলে যায়। কিন্তু চিড়িয়াখানায় যেহেতু প্রাণীগুলি খাঁচা এবং বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে থাকে তাই এমন পরিস্থিতিতে তাদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে প্রাণী গুলির যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় তাই তাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূলত তাদেরকে বেশি করে ফল এবং সবজি দেওয়া হচ্ছে খাওয়ার জন্য। এই সময় তাদেরকে এমন সব খাবার দেওয়া হচ্ছে যেগুলোতে অধিক পরিমাণ পানি রয়েছে। বানর ভাল্লুক হরিণ ইত্যাদি প্রাণীদেরকে অধিক জলযুক্ত ফল দেওয়া হচ্ছে যাতে তাদের শরীরে জলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই তাদেরকে অধিক পরিমাণে তরমুজ শসা লাউ ইত্যাদি সবজি বেশি করে খেতে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি খাঁচার পাশেই রাতে থাকার জন্য বিশেষ ধরনের কক্ষ রয়েছে। বেশি গরমের সময় দিনের বেলাতেই প্রাণীগুলি এসব কক্ষে চলে যায়। তাদের ঘর গুলিকে ঠান্ডা রাখার জন্য বরফ যুক্ত কেস রাখা হচ্ছে ভেতর। বিশেষ করে দুপুর ১২ টা থেকে দুইটা পর্যন্ত সময়ের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে, এই সময় বরফের বক্সগুলি রাখা হচ্ছে খাঁচার ভেতরে।
সেই সঙ্গে ভালুক এবং সিংহ জাতীয় প্রাণীদেরকে সকাল বিকাল দুবেলা করে স্নান করানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে খাঁচার ভিতর জলের পাত্র গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল রাখা হচ্ছে। যাতে তারা পান করার পাশাপাশি নিজেদের ইচ্ছামত গা ভিজিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি খাচা গুলির ভিতরে যাতে সরাসরি সূর্যের তীব্র আলো না না পড়ে তার জন্য খাঁচার উপরে সবুজ রঙের নেট লাগিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখিসহ কিছু কিছু প্রাণীর খাচায় বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্লুকোজ যুক্ত পানীয় দেওয়া হচ্ছে তাদের বলেও জানান চিরঞ্জীব দেবনাথ।
সব মিলিয়ে গ্রীস্মের এই দাবদাকে খাঁচার মধ্যে রাখা প্রাণী গুলির যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় তাই তৎপর রয়েছে সিপাহীজলা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
0 মন্তব্যসমূহ