Advertisement

Responsive Advertisement

টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক সূচনা হল

আগরতলা, ২৩ মে : যক্ষ্মা বা টিবি রোগ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০২৫ সালের মধ্যে টিবি নির্মূলীকরণের লক্ষ্য স্থির করেছেন। টি বি রোগ নির্মূলীকরণের লক্ষ্যে “প্রধানমন্ত্রী টিবি যুক্ত ভারত অভিযান"- এর অঙ্গ হিসেবে গত ২৪ মার্চ, ২০২৩ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন । টিবিকে নির্মূল করতে এবার থেকে পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই লক্ষ অর্জন করতে সারা দেশের পাশাপাশি আমাদের রাজ্যেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর-ই অঙ্গ হিসাবে 24 মে 2023 রবীন্দ্র ভবনে টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মাননীয় মেয়র শ্রী দ্বীপক মজুমদার, মুখ্য সচিব শ্রী জে কে সিনহা।
এদিন “টি বি মুক্ত পঞ্চায়েত গঠনের লক্ষ্যে ত্রিপুরা'- শীর্ষক এই পুস্তিকার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন অতিথিরা।
যক্ষ্মা রোগ নির্মূলীকরণ কর্মসূচীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের নিরিখে এদিন বিভিন্ন জেলাকে সম্মানিত করা হয়। যেমন- জাতীয় যক্ষ্মা নির্মূলীকরণ কর্মসূচীর মধ্যে টি বি নোটিফিকেশন হলো একটি মানদন্ড সূচক। 2023 সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে রাজ্যে ১০৫৪ জন টি বি রোগী নথিভুক্ত হয়েছে যেখানে টার্গেট ছিল। ১০৬৭ জন। সাফল্যের হার ১৮.৮%। রাজ্যের ৮ জেলার মধ্যে ধলাই জেলায় সবথেকে বেশী টি বি রোগী নথিভুক্ত হয়েছে। ধলাই জেলায় ১০ জন টি বি রোগী নথিভুক্ত হয়েছে যেখানে টার্গেট ছিল ৮৩ জন। সাফল্যের হার ১০০%। এদিন ধলাই জেলাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
নিক্ষয় পোষণ যোজন যোজনায় প্রত্যেক মাসে প্রতিটি টি বি রোগীকে চিকিৎসা চলাকালীন পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৭৮% অর্থাৎ ৮২২ জন টি বি রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উত্তর ত্রিপুরা জেলা ৮ টি জেলার মধ্যে সব চাইতে বেশী পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৯৭% অর্থাৎ ১৪০ জন টি বি রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এদিন উত্তর ত্রিপুরা জেলাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
কোনও ব্যক্তির টি বি রোগ হওয়ার পর সেই ব্যক্তির নাম নথিভুক্ত হওয়ার সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে সেই টি বি আক্রান্ত রোগী ৫০০ টাকা পেয়েছেন। ৮ টি জেলার মধ্যে গোমতী জেলায় সবচেয়ে কম সময় গড়ে ৩০ দিনের মধ্যে টি বি আক্রান্ত রোগীকে ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তাই এদিন গোমতী জেলাকে পুরষ্কৃত করা হয়।
যক্ষ্মা একটি সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগের জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন কেননা এখনো এই রোগ সম্পর্কে জনমানসে ভয়, লজ্জা ও কুসংস্কার রয়েছে। টিবির মত সংক্রামক রোগের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে, স্বাস্থা পরিষেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং যক্ষ্মা নির্মূলীকরণের দিকে অগ্রসর হতে পঞ্চায়েতিরাজ-এর সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে।
"হ্যা ! আমরা যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করবো” এই ভাবনাকে সামনে রেখে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করে প্রতিটি পঞ্চায়েতে এই অভিযানকে সফল করতে হবে। টিবি নির্মূল করার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং পঞ্চায়েতগুলোর সক্রিয় ভূমিকা জনমানসে তুলে ধরা প্রয়োজন। এই রোগকে প্রতিহত করতে সারা রাজ্যে সরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে । রোগীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি চিকিৎসা চলাকালীন পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য মাসিক ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর থেকে রাজ্যের প্রত্যেক টিবি চ্যাম্পিয়ান ব্যক্তিগণ আশা-কর্মীদের সঙ্গে ১৫টি বাড়ি পরিদর্শন করবেন । তাদের মাসিক সাম্মানিক দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। টিবি চ্যাম্পিয়ানরা সারা রাজ্যে জনগণের মধ্যে টিবি রোগ চিকিৎসা সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেবেন। টিবি মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার এই কর্মযজ্ঞে প্রতিটি পঞ্চায়েত। জন আরোগ্য সমিতি/ মহিলা আরোগ্য সমিতি/ ভিলেজ হেলথ সেনিটেশন এন্ড নিউট্রিশন কমিটি সহ সমস্ত অংশের সামাজিক সংস্থা, কর্পোরেট সংস্থা এই অভিযানে অংশ নেবে।
আমাদের দেশের পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সরকারী কর্মসূচীর বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। বিগত বছরগুলোতে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য ও সর্বাত্মক উন্নয়নের স্বার্থে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই যক্ষ্মা বা টিবির মত একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করতে সরকার পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে সক্রিয়ভাবে এই কর্মকান্ডে সামিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টিবি রোগ এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়ে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্মশালার মাধ্যমে
সম্যকভাবে অবহিত করা হবে এবং পরবর্তীতে তারাই গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। তাছাড়া গ্রামে-গঞ্জে টিবির স্ক্রিনিং সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, টিবি রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন কিনা, এই সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন জনপ্রতিনিধিরা। জাতীয় যক্ষ্মা প্রাদুর্ভাব সমীক্ষা অনুসারে, উপসর্গযুক্ত যক্ষ্মা রোগীদের বেশীর ভাগ-ই কেবলমাত্র সঠিকভাবে সচেতন না থাকার কারনে কোন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করে না । এই পরিস্থিতি থেকে একটি সদর্থক স্থানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে টিবির বিরুদ্ধে জন আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। তাই জনসাধারণের সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা, টিবি রোগ নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কারকে দূর করে একটি সচেতন সমাজ গড়ে তুলতে হবে এবং সেই ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানগুলোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

ন্যাশনাল কুয়ালিটি এস্যুরেন্স প্রোগ্রামের একটি প্রকল্প হলো LAQSHYA । এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো হাসপাতালের লেবার রুম এবং অপারেশন থিয়েটারের পরিষেবার সার্বিক মান উন্নয়ন করা যেখানে মা ও শিশু মৃত্যু রোধ করা যায়। এই প্রকল্পে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সরকারের নির্ধারিত মানদণ্ডের উপর বিচার করে আগরতলার আই জি এম হাসপাতালের লেবার রুম এবং ডেলিভারি অপারেশন থিয়েটারের পরিষেবার সার্বিক মান যাচাই করে। একটি চিঠির মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে আই জি এম হাসপাতালের লেবার রুম এবং ডেলিভারি অপারেশন থিয়েটার ৭১% জাতীয় মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে LAQSHYA-র জাতীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতির জন্য ২৪ মে ২০২৩ -র অনুষ্ঠানে আই জি এম হাসপাতালকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের সচিব ড. দেবাশীস বসু, স্বাস্থ্য অধিকারের অধিকর্তা ডাঃ শুভাশিষ দেববর্মা, পরিবার পরিকল্পনা ও রোগ প্রতিরোধক অধিকারের অধিকর্তা ডা: সুপ্রিয় মল্লিক, স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত সচিব তথা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা শ্রী শুভাশিস দাস, ধলাই জেলার জেলা শাসক ড: সিদ্ধার্থ শিব জয়সবাল, উত্তর ত্রিপুরার জেলা শাসক শ্রী নাগেশ কুমার বি ডেভলপমেন্ট পার্টনার ডাব্লিও এইচ ও-র রিজিওনাল টিম লিড ( পূর্ব এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল) ডা: ডি ডেকা, জি এইচ পি আই ই জি ও-র ইন্ডিয়া কানট্রি ডাইরেক্টর ডাঃ সোমেশ কুমার প্রমুখ। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এক প্রেস রিলিজে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ