Advertisement

Responsive Advertisement

তিন কোটি টাকা ব্যায়ে আগরতলায় গড়ে তোলা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় অর্কিডেরিয়াম

আগরতলা: বন সংরক্ষণ আইন অনুসারে গড়ে তোলা হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় অর্কিডেরিয়াম। যা বিরল প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষণ, বৃদ্ধি ও গবেষণার পাশাপাশি নতুন নতুন হাইব্রিড প্রজাতির অর্কিড তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। আগামী দিনে দেশের অর্কিড গবেষণার অন্যতম এক জায়গা হয়ে উঠতে পারে এই অর্কিডেরিয়াম। 
প্রকৃতিতে অনন্য সুন্দর এক উদ্ভিদ হচ্ছে অর্কিড। এদের ফুল যেমন সুন্দর তেমনি তাদের পাতা কাণ্ডও দেখতে অনেক সুন্দর। তাই শখের বাগানীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই অর্কিড। বিশ্বে বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর মধ্যে হাতে গুনা কয়েকটি প্রজাতিই বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। বাকিগুলি বন্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে।
বিশ্ব জোড়ে যেভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন ধ্বংস হচ্ছে এর ফলে অন্যান্য গাছের সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে অর্কিডের প্রাকৃতিক আবাসও।
রাজ্যসহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর সংখ্যায় নানা প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। তবে এই অঞ্চলেরও বিভিন্ন জায়গায় এখন অর্কিডের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে।
রাজ্য ও অন্যান্য বিভিন্ন জায়গার অর্কিডকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে সরকারের বনদপ্তর আগরতলায় একটি অর্কিডেরিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। রাজধানী আগরতলার শালবাগান এলাকার অক্সিজেন পার্কের মধ্যে বিশাল জায়গা জোড়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত একটি অত্যাধুনিক সেডের ভেতরে রাখা হয়েছে দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা অর্কিড গুলি। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে এই সেডটি, যেমন ভেতরের গাছ গুলির জন্য দিনের কতটুকু সময় সরাসরি সূর্যের আলো পড়া প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু সময়ের জন্য উপরের সেড নিজে থেকেই খুলে যাবে তারপর নিজেই বন্ধ হয়ে যায়, ঠিক একই ভাবে বৃষ্টি এলে যদি ভেতরে জলের প্রয়োজন হয় তবেই নিজে থেকে সেড খুলে যাবে। একই ভাবে ভেতরের আদ্রতা সহ অন্যান্য বাকি সবকিছু প্রোগ্রামিং করে দেওয়া আছে। এগুলি পরীক্ষা করে নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে বলে বলে জানান বন দপ্তরের কনজারভেটর অফ ফরেস্ট ড. ওয়াঙডাপ ভুটিয়া।
তিনি আরো বলেন এটি উত্তরপূর্ব ভারতের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় ইনহাউস অর্কিডেরিয়াম। এতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্কিড সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার পাহাড়ি অঞ্চলে যে সব অর্কিড জন্মে এগুলিকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে এখানে। এই সব অর্কিডের জন্য সেডের ভেতরে আরো একটি কাঁচের ঘর তৈরী করা হয়েছে। এর মধ্যে এয়ার কন্ডিশন মেশিনের মাধ্যমে তাপমাত্রাকে আরো কমিয়ে হিমালয় অঞ্চলসহ উঁচু পাহাড়ি এলাকার অর্কিড গুলি রাখা হয়েছে যাতে ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে ও বেড়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির অনেক অর্কিড রয়েছে বলেও জানান।
এই অর্কিডেরিয়াম এক দিকে যেমন বিরল প্রজাতির অর্কিডগুলিকে বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তেমনি একে সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন হাইব্রিড জাত তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত হাইব্রিড জাত এই জন্য তৈরী করা হবে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা যায়। কারণ বিশ্ব জোড়ে এখন নানা রঙ বেরঙের হাইব্রিড অর্কিডের চাহিদা রয়েছে। এগুলি চাষ করে চাষীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। এই সেডের ভেতরে ভেন্ডা, ফেলেনোপসিস, সিম্বডিয়াম, ডেনড্রবিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের রঙিন হাইব্রিড অর্কিড রয়েছে। সব মিলিয়ে এটি তৈরী করতে ও প্রথম তিনি বছর পরিচালনার খরচ ধরা হয়েছে ৩কোটি টাকা। সেডের বাইরেও স্থানীয় নানা জাতের অর্কিড সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত যে গুলি অপেক্ষাকৃত বেশী তাপমাত্রায় টিকে থাকে এগুলিকে রাখা হয়েছে।
ড. ওয়াঙডাপ ভুটিয়া রাজ্যে অর্কিড প্রজাপতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান এখন পর্যন্ত এরাজ্যে ৬০টির বেশী জাতের অর্কিড চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, যার তালিকা সেডের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে তিনি যে ভাবে ঘুরে দেখেছেন তাতে তার ধারণা এরাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশে ৩০০টি বেশী প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।
তবে এটি এখনো সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। নূন্যতম একটি প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করে একে খুলে দেওয়া হবে। মানুষ এখানে এসে দেখতে পারবেন একদিকে যেমন এটি একটি দর্শনীয় জায়গা হয়ে উঠবে। তেমনি যারা অর্কিড চাষ করছেন বা চাষের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন তারা এটি ঘুরে দেখে ধারণ নিতে পারবেন এরাজ্যে কি কি ধরেন অর্কিড চাষ সম্ভব, কি ভাবে চাষ করতে হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ