আগরতলা, ১১মে ২০২৩: পর্যটন শিল্প রাজ্যের বিকল্প অর্থনীতির উৎস হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়েছে। আজ সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে পর্যটন দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। সভায় পর্যটন দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রাজ্যের প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পটকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পটে পর্যটকদের সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো রাজ্যেও ট্যুরিস্ট গাইড ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করে তোলার প্রয়োজন রয়েছে বলে সভায় মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দেশ বিদেশের পর্যটকদের থাকা খাওয়ার সুবিধার্থে রাজ্যের প্রতিটি ট্যুরিস্ট স্পটের কাছে হোম স্টে ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
সভায় পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা জানান, রাজ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করতে দপ্তর একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্যারাগ্লাইডিং, ওয়াটার স্পোর্টস, প্যারামোটোরিং, হট এয়ার বেলুন, ক্যায়াকিং, রক ক্লাইম্বিং ইত্যাদি। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে আগরতলা, সিপাহীজলা, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, তীর্থমুখ, মন্দিরঘাট, আমবাসা, রইস্যাবাড়ি, বড়মুড়া এই ১০টি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ করা হয়েছে। এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৮২ কোটি ৮৪ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা মঞ্জুর করেছে। এছাড়া স্বদেশ দর্শন-১ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুরমাছড়া ওয়াটার ফলস, নীরমহল, বিলোনীয়ার চোত্তাখলায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান, জোলাইবাড়িতে আভাংগাছড়াস্থিত শহীদ। ধনঞ্জয় স্মৃতি উদ্যান, বক্সনগরস্থিত বৌদ্ধস্তূপ, জম্পুইহিল, ঊনকোটি, ভুবনেশ্বরী মন্দির, গুণবতী মন্দির এবং পিলাক এই ১০টি পর্যটন ক্ষেত্রকে আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
পর্যটন দপ্তরের সচিব সভায় আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাদ প্রকল্পে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র উদয়পুরের মাতাবাড়িকে বহুমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রসাদ প্রকল্পে ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে।
সভায় সচিব জানান, গত ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী স্টেট ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ২টি ডিগ্রি ও ৫টি ডিপ্লোমা কোর্সে পঠন পাঠনের সুযোগ রয়েছে। সেখানে বর্তমানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল এবং টাইপ ফাইভ কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ চলছে। সচিব জানান, পুষ্পবন্ত প্রাসাদ ও দরবার হলকে সংস্কার করে জাতীয়মানের অত্যাধুনিক মিউজিয়াম ও আর্ট সেন্টার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। তিনি জানান, রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজ্যে ২০১৯ সালে পর্যটন দপ্তর ‘পর্যটন সহায়ক প্রকল্প' নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২২ জনকে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সচিব আরও জানান, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তর ৪৯টি লগহাট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩৩টি লগহাট নির্মাণ করে তা চালু করা হয়েছে। বাকি ১৬টি লগহাট নির্মাণের কাজ চলছে। সভায় এছাড়াও রাজ্যের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে দপ্তর যে পঞ্চবার্ষিকী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সে বিষয়ে পর্যটন দপ্তরের সচিব আলোচনা করেন।
পর্যালোচনা সভায় পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা তপন দাস উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ