Advertisement

Responsive Advertisement

কৃষির সার্বিক বিকাশের উপরই নির্ভর করছে রাজ্যের অর্থনীতির ভিত্তি: মুখ্যমন্ত্রী

 আগরতলা, ৮ মে ২০২৩: কৃষির সার্বিক বিকাশের উপরই নির্ভর করছে রাজ্যের অর্থনীতির ভিত্তি। আমাদের রাজ্যের জমি ও আবহাওয়া কৃষিকাজের পক্ষে খুবই অনুকূল। তাই কৃষির বিকাশে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। আজ সচিবালয়ে ২ নং কনফারেন্স হলে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে জলসেচ ব্যবস্থার আরও উন্নতি করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জলসেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নত জলসেচের উৎস সৃষ্টি করতে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরকে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি নির্ভর করে জলসেচের উপর। সেক্ষেত্রে জলসম্পদ দপ্তর, বিদ্যুৎ দপ্তর এবং কৃষি দপ্তরকে একসঙ্গে সমন্ব্য রেখে কাজ করতে হবে। তবেই কৃষির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার কৃষকদের আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। রাজ্যে যেসব কৃষি জমি পতিত রয়েছে সেগুলিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ধান চাষের পাশাপাশি গম ও ভুট্টা জাতীয় শস্য উৎপাদনে দপ্তরকে উদ্যোগী হতে হবে। তাছাড়াও রাজ্যের মাটিতে যেসব ফসল উৎপাদন বেশি হয় সেসব ফসল উৎপাদনে দপ্তরকে গুরুত্ব দিতে হবে। সভায় ফল ও অর্থকরী ফসল চাষেও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনাকে কাজে লাগাতে হবে।
পর্যালোচনা সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় সচি প্রতিবেদনের মাধ্যমে কৃষি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। সচিব জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার হেক্টর এলাকায় ৮ লক্ষ ৬৬ হাজার এমটি খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ লক্ষ ৪৪ হাজার এমটি খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬৯ জন কৃষককে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের ১৩টি কিস্তিতে ৫৫৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় গত পাঁচ বছরে ১০ লক্ষ ৮ হাজার ৬৮ জন কৃষককে বীমার আওতায় আনা হয়েছে। যা ২০১৩-১৭ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২৩ হাজার ৪৫৪ জন। গত পাঁচ বছরে ৩ লক্ষ ৭ হাজার ৫৫ জন কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের গত পাঁচ বছরে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্যে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ২০ টাকা ৪০ পয়সা দরে ক্রয় করা হচ্ছে।
পর্যালোচনা সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব আরও জানান, গত পাঁচ বছরে কৃষকদের কাছ থেকে ৩২৫ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার ধান ক্রয় করা হয়েছে। ২০২২- ২৩ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৬৬৯.৪৮ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সারা রাজ্যে ৩১টি এছপিও গঠন করা হয়েছে। এতে ৮ হাজার ৫০ জন কৃষক যুক্ত রয়েছেন। গত পাঁচ বছরে কৃষকদের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে ২৮ হাজার ৮০০টি বিভিন্ন প্রকারের কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে। এতে ১৬২ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। মোট ৩৬৭টি কৃষি মেশিনারি ব্যাঙ্ক গঠন করা হয়েছে। সভায় সচিব জানান, গত পাঁচ বছরে রাজ্যে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৫৪৪টি সয়েল হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে।
পর্যালোচনা সভায় সচিব বলেন, গত ৫ বছরে পর্যন্ত ১৮ হাজার হেক্টর এলাকায় সুগন্ধি ধান, আনারস, গোল মরিচ, লেবু, আদা, হলুদ ইত্যাদি জৈব চাষ পদ্ধতিতে ফলানো হয়েছে। এতে প্রায় ১৭ হাজার ৩৩৩ জন কৃষক যুক্ত রয়েছেন। সারা রাজ্যে এরজন্য ১৪১টি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। এফপিসি গঠন করা হয়েছে ৩৬টি। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে জৈব চাষ আরও বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সচিব জানান, আগামীতে আনারস চাষীদের উপর একটি প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে সেগুলি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা ক্ষেত্র পর্যায়ে গিয়ে আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সচিব বলেন, পাঁচ বছরে ৩২টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। আরও ৪৩টি চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ৭৫টি কৃষক জ্ঞানার্জন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আরও ৫টি স্থাপনের কাজ চলছে। এক হাজার মেট্রিকটন ক্ষমতা সম্পন্ন ২৭টি চালের গুদাম তৈরি করা হয়েছে। আরও ৪টি তৈরির কাজ চলছে। ৬টি সুসংহত বীজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র ১১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হবে। ৪৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বারে ১৮টি গ্রাম্য বাজার তৈরি করা হবে। ১ কোটি ৫ লক্ষ টাকা বায়ে ১১টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র তৈরি করা হবে। সভায় সচিব উদ্যান পালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির সাফল্য নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। পর্যালোচনা সভায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতনলাল নাথ, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস উপস্থিত ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ