আগরতলা, ৩ মে ২০২৩: সারুমে মৈত্রী সেতু দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে এটি হবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে। ত্রিপুরা আগামী দিনে ব্যবসা বাণিজ্যের হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনার উপর অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। আসন্ন উত্তর পূর্ব গ্লোবাল ইনভেস্টর সামিট উপলক্ষে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও দেশ বা রাজ্যের বিকাশ নির্ভর করে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর। ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ছে। ত্রিপুরার প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে রাজ্যে ৭টি জাতীয় সড়ক গড়ে উঠছে। ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরার অবস্থান যথেষ্ট ভালো জায়গায় রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাজ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বর্তমানে প্রায় ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজ্য থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে। তাছাড়া আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। ত্রিপুরায় গড়ে উঠা এই সমস্ত পরিকাঠামোগত শিল্প সহায়ক সুযোগ সুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে শিল্প গড়ে তোলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যের ভবিষ্যৎ অনেকটাই উজ্জ্বল। রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে রাজ্য শিল্প দপ্তর 'স্বাগত' পোর্টাল চালু করেছে। রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন রাবার, বাঁশ, চা, উদ্যানজাত ফসল ও ব্যাপক পরিমাণে আগর গাছ রয়েছে। এই সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে নানাবিধ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন দেশের মধ্যে কেরালার পর ত্রিপুরাই হচ্ছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাবার উৎপাদক রাজ্য। পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রেও রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। গোলটেবিল বৈঠকে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, ত্রিপুরা আগামীদিনে বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গন্তব্যস্থল হয়ে উঠবে। ত্রিপুরায় কৃষি, উদ্যানজাত, বাঁশ, রাবার, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্য, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পিএম গতিশক্তি, জি-২০, ইনভেস্টমেন্ট সামিট ইতিমধ্যেই রাজ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, বিভিন্ন দেশ যখন নানা সমস্যায় ভুগছে তখন ভারতের অর্থ ব্যবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরার প্রবৃদ্ধির হারও উল্লেখযোগ্য। দেশের বিভিন্ন নিরপেক্ষ সংস্থার সমীক্ষায়ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্রিপুরার প্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। তিনি রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেন। বৈঠকে ডোনার মন্ত্রকের সচিব লোকরঞ্জন বলেন, দেশের সার্বিক বিকাশে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। বৈঠকে তিনি সুস্থায়ী উন্নয়নের গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি। রাজ্যে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোগীগণ বৈঠকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বৈঠকে রাজ্যে মেডিক্যাল, রাবার, প্লাইউড, আগরবাতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিল্প স্থাপনের জন্য ত্রিপুরা সরকার এবং বেসরকারি শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে মউ স্বাক্ষরিত হয়। তাছাড়াও এই গোলটেবিল বৈঠকে বন, পর্যটন, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি ও উদ্যানজাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাময় দিকগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব ও অধিকর্তাগণ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেন। বৈঠকে রাজ্য এবং বহিরাজ্য সহ প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক ও রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবর ধনানিয়া উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ