এস চন্দ্রনাথ
শাল গাছ সোজা উঁচু ও লম্বা হয়ে থাকে। ডালপালা অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। এটি বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। শাল গাছের বৃদ্ধি স্বল্প থেকে মাঝারি হারের হয়ে থাকে। এটি ৩০ থেকে ৩৫ মিটার উচুঁ হতে পারে এবং এর কান্ডের ব্যাস ২ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতা উজ্জ্বল সবুজ বড় ডিম্বাকৃতি হয়। পাতা লম্বায় ১২ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার, চওড়ায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ও বোঁটা ২.৫ সেন্টিমিটার। শীতের শেষে এই গাছের পাতা ঝরতে থাকে এবং বসন্তের পুরো গাছ পাতা হীন হয়ে যায়। বসন্তের মাঝামাঝি আবার নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। মার্চ মাসে এর ফুল ফোটে ডালের আগা ও পাতার কক্ষ থেকে ছোট ছোট ফুলের লম্বা ও শাখাযুক্ত মঞ্জুরি বের হয়।এপ্রিল থেকে মে মাসে বীজ গুলি ঝরে পড়ে মাটিতে। এক একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছে লক্ষাধিক বীজ হয়। তবে এদের বীজের অঙ্কুরোদগমের হার খুব কম হয় বলে অনেক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। শাল কাঠ শক্ত হওয়ায় এর অনেক ব্যবহার রয়েছে। আগে কাঠের সেতু সেতু তৈরির সময় শাল গাছ সেতুর খুটিতে ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও বৈদ্যুতিক খুটি রেল লাইনের স্লিপারের নিচে শালকাঠ ব্যবহার করা হতো।শালের আদি বা মূল নিবাস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল থেকে শুরু করে মায়ানমারেও শাল গাছ জন্মায়। ত্রিপুরার জঙ্গলে এই গাছ রয়েছে। আগরতলার পার্শবর্তী গান্ধীগ্রাম এলাকায় যাওয়ার আগে শালবাগান এলাকায় প্রচুর শালগাছ রয়েছে। এই শাল বাগানটি রাজ্য সরকারের বনদপ্তরের অধীনে রয়েছে। এই শালবাগানটি ১৯২৭ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তৎকালীন রাজা গড়ে তুলেছিলেন। মূলত জ্বালানি কাঠের জন্য এই বাগানটি গড়ে তোলা হয়েছিল। দক্ষিণ জেলার শান্তির বাজার এলাকায় এমন একটি বিশাল বাগান রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় শালবাগান রয়েছে।
আগরতলার শালবাগানে ২০২১ সালে একটি পার্ক গড়ে তোলা হয়, যার নাম দেওয়া হয়েছে অক্সিজেন পার্ক। প্রায় ২৯.৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে এটি। শালবাগানের রাস্তা দিয়ে গান্ধীগ্রাম যাওয়ার পথে রাস্তার দুই ধারে উঁচু উঁচু শাল গাছ নজরে আছে। শীতের শেষ এবং বসন্তের শুরুতে অক্সিজেন পার্ক এমন কি রাস্তা ধরে গান্ধীগ্রাম যাওয়ার পথে পাতা ঝরার দৃশ্য চোখে পড়ে।এপ্রিল মে মাসের দিকে গেলে রাস্তার দুই পাশে লাখ লাখ শাল বীজ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রকৃতিও নতুন সাজে সেজে উঠে তার চাকুস দৃশ্য লক্ষ্য করা যায় শাল বাগানে গেলে।
0 মন্তব্যসমূহ