আগরতলা, ৩১মে : গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এক্ষেত্রে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিক সহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ প্রজ্ঞা ভবনে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা ও অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত একদিবসীয় কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা মানিক সাহা একথা বলেন। কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিকাশে পূবে সক্রিয় হও (অ্যাক্ট ইস্ট) নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই নীতির বাস্তবায়ণের মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। ত্রিপুরাও এই নীতির ফলে উপকৃত হয়েছে। কর্মশালায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক সহ গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের ক্ষেত্র স্তরের আধিকারিক ও প্রকৌশলীগণ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সব সময় বলে থাকেন যে, গ্রামের উন্নয়ন না হলে কোন রাজ্য উন্নতির পথে এগুতে পারবে না। গ্রামীণ এলাকার জনগণের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ প্রতিটি টাকা যাতে সঠিকভাবে ব্যয় হয় সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে রাজ্য সরকারও সেই দিশায় কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল যাতে গ্রামীণ এলাকার জনগণ লাভ করতে পারেন সে বিষয়ে দপ্তরের আধিকারিকগণ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) সহ বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্য বর্তমানে দেশের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আর এটা রাজ্যের জন্য নিশ্চয়ই গর্বের বিষয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ২৪ হাজার ৯৮৯টি ঘরের মঞ্জুরী পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৮-১৯ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে রাজ্য ২৮,৮৩৮টি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছিল। পরবর্তীতে রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কাচা ঘরের সংজ্ঞা পরিবর্তনের পর ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যের জন্য ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫৯০টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়াও 2021-22 অর্থবর্ষে ৪৪, ৯২১টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। তাছাড়া গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত আরও ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬৯৫টি ঘরের বরাদ্দ দিয়েছে। এটা ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুফল বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে বর্তমানে ১১টি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজ্য থেকে চলাচল করছে। এছাড়াও ইন্টারনেট, সড়ক, আকাশপথে যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার জনগণকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে ত্রিপুরা রুরাল লাইভলিহুভ মিশনের মাধ্যমে স্ব-সহায়ক দল গঠন করে মহিলাদের যুক্ত করানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়নে আধিকারিকদের সব সময় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে। তবেই জনগণ দ্রুত ও সময়ের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা লাভ করতে পারবেন। আধিকারিকদের তাদের নিজ নিজ স্থানে শ্রেষ্ঠ পরিষেবা প্রদানে তৎপর থাকতে হবে।তবেই জনগণ তাদের সব সময় মনে রাখবেন। অনুষ্ঠানে মুখ্য সচিব জে কে সিনহা বলেন, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে গ্রামোন্নয়ন দপ্তর আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এরফলেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এম জি এন রেগা সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সফল রূপায়ণে রাজ্য দেশের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীও বিভিন্ন সময় রাজ্যের প্রশংসা করেছেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব ডাঃ দেবাশিষ বসু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রুরাল লাইভলিহুভ মিশনের (টিআরএলএম) মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক প্রসাদ রাও ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব অরুণ কুমার রায়।
0 মন্তব্যসমূহ