আগরতলা, ২৮ জুন: সিকিমের মত কম জনসংখ্যার রাজ্যে যদি ঔষধ প্রস্তুতকারী কারখানা ভালো ভাবে চলতে পারে, তবে এরাজ্যে কেন ঔষধ কারখানা হবে না। এবিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকারিকদের গভীর ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এই অভিমত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহার। বুধবার রাজধানী আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে ত্রিপুরা রাজ্য ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইস মনিটরিং এবং রিসোর্স ইউনিটের উদ্যোগে "সঠিক ঔষধ, সঠিক দাম" শীর্ষক একদিনের এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা। সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই কথাগুলি বলেন। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আগে এক সময় রাজ্যে ঔষধ তৈরীর কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলি হারিয়ে গিয়েছে। তাই এগুলিকে এখন আর দেখা যায় না। তবে বহিঃরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা এরাজ্যে অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে আবার এরাজ্যে ঔষধ শিল্প স্থাপন করতে সমস্যা হবে না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে তিনি এদিন স্বাস্থ্য দপ্তর এবং পুলিশ প্রশাসনকে শতর্ক করে বলেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশী রোজগারের লোভে সামনে ঔষধ বিক্রির লাইসেন্স নিয়ে দোকান খুলে রেখে পেছন দিকে নিষিদ্ধ ড্রাগ বিক্রি করছে। এর ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম নষ্ট হচ্ছে। তাই এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের দিকে কড়া নজর দেওয়ার এবং এদের বিরুদ্ধে সমাজের সকল অংশের মানুষের গর্জে উঠার আহ্বান রাখেন তিনি। এইসব নিষিদ্ধ ড্রাগস্ এর বিরুদ্ধে যাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গৌহাটি এবং হরিয়ানাতে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলিতে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন নিষিদ্ধ ড্রাগসের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।
বর্তমান রাজ্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ পরিমানে নিষিদ্ধ ড্রাগস বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। তবে এসব করেই রাজ্য সরকার চুপচাপ বসে নেই। নিষিদ্ধ ড্রাগসের ব্যবহার যাতে শূন্যে নামিয়ে আনা যায় এর জন্য সরকার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যান্য জায়গা থেকে ড্রাগস রাজ্যে আসছে, এগুলির আসা বন্ধ করার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সাধারণ মানুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত এই বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত ড্রাগসের ব্যবহার বন্ধ করা কঠিন বলেও জানান তিনি। রাজ্যের নেশা মুক্তির কেন্দ্র রয়েছে, তবে এই কেন্দ্র যাতে প্রতিটি জেলাতে একটি করে চালু করা যায় এদিকে রাজ্য সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ড্রাগসের চাহিদা প্রচুর, তাই মায়ানমার থেকে প্রতিবেশী রাজ্য হয়ে আমাদের এ রাজ্যে নিষিদ্ধ ড্রাগস আসছে এবং সবশেষে এগুলো একটা বড় অংশ বাংলাদেশের যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে রাজ্য সরকার ড্রাগসের বিরুদ্ধে কঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ অনেকটাই স্বস্তি ব্যক্ত করেছে এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এই কাজের জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। সমাজ এবং রাজ্যকে সুস্থ সুন্দর রাখার জন্য ড্রাগসকে নির্মূল করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান রাখেন। আগামী দিনে যাতে সবাই মিলে কাজ করে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার যায় এই আহবান রেখে বক্তব্য শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের এই সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের ন্যাশনাল ফার্মাসিটিক্যাল প্রাইসটিং অথরিটির ডিরেক্টর রতন কুমার খাত্বানী, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব ড. দেবাশীষ বসু, রাজ্য সরকারের ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলার কাঞ্চন সিনহা প্রমুখ। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিস্ট এবং ফার্মাসিস্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। রাজ্য সরকারের অফিস অফ দ্যা ডেপুটি ড্রাগস কন্ট্রোলারের উদ্যোগে এদিনের এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
0 মন্তব্যসমূহ