আগরতলা, ২৩ জুন: পশ্চিমবঙ্গকে মিনি পাকিস্তানে রূপান্তরিত করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই অভিযোগ তুলে একরাশ হতাশার সঙ্গে নাম না করে তৃণমূল দলের তীব্র সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। শুক্রবার ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ কার্যালয়ে ড: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করতে গিয়ে বঙ্গ রাজনীতি পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূলকে বিধলেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান দুর্দশাজনক অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানকার কিছু অংশের মানুষ ড: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির অবদান ভুলে গিয়েছেন। তাদের হয়তো মনে নেই যে কার অবদানের জন্য বাংলা তৈরি হয়েছিল।
তিনি বলেন, ড: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তি, একজন সম্মানিত শিক্ষাবিদ যিনি মাত্র ৩৩ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। তিনি এই পদ অর্জনকারী সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার প্রসারে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার কথা ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি। ১৯৩৭ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা ভাষায় সমাবর্তন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। যা তখনকার সময়ে ভারতের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতির সাক্ষী হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ক্ষমতায় থাকা লোকজন মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের সারমর্ম ভুলে গিয়েছেন এবং যার ফল হিসেবে তারা পশ্চিম বাংলাকে একটি মিনি পাকিস্তানে পরিণত করেছেন। এটি খুবই বেদনাদায়ক।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৪ সালের পরে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের ক্ষমতায় এসেছেন তখন থেকে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদির কারণে মানুষ স্বচ্ছ সরকার কী তা অনুধাবন করতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ড: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাই প্রধানমন্ত্রী মোদির দিক নির্দেশনা মেনে স্বচ্ছভাবে কাজ করা সরকার এবং দল হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই নীতি অনুসরণ করার মাধ্যমে আমরা জনগণের সমর্থন অর্জন করতে পারি।
নির্বাচনী বিজয় নিশ্চিত করার প্রশ্নে দল ও জনগণের মধ্যে সংযোগ আরো জোরদার করার জন্য দলীয় কর্মী ও নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, জনগন পাশে থাকায় বিজেপি - আইপিএফটি সরকার পুনরায় সরকার গড়তে পেরেছে। কাজেই জনসাধারণকে কোনভাবেই হেলাফেলা করা যাবে না। তারা সবকিছুই বুঝেন। আগামী নির্বাচনেও আমাদের অবশ্যই আরও বেশি ভোটে বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা জনগণের সাথে আরো দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করবো। এজন্য আমাদের প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, মানুষের সাথে দেখা করতে হবে এবং সংযোগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু লিফলেট এবং পোস্টার বিতরণ যথেষ্ট হবে না। জনগণের সমর্থন পেতে হলে দল এবং সরকারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বকে অবহেলা করার জন্য পূর্ববর্তী কেন্দ্রীয় সরকারেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অ্যাক্ট ইস্ট নীতির কারণে ত্রিপুরা অভূতপূর্ব উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো বিরোধী দলগুলি বিভিন্ন কায়দায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু এই রাজ্যের জাতি জনজাতি উভয় অংশের মানুষ চায় শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে।
0 মন্তব্যসমূহ