আগরতলা: কৃত্রিম উপায়ে সামুদ্রিক নোনা জলের পরিবেশ তৈরি করে আগরতলার কলেজটিলা এলাকার মৎস্য দপ্তরের হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ বছর এই কেন্দ্র থেকে প্রায় চার লাখ চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সুপারেনটেন্ট হীরক সরকার।
রাজ্যে মাছের চাহিদার একটা অংশ এখনো বহির রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়, তবে বর্তমান সরকার রাজ্যে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। শুধুমাত্র স্থানীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়াই নয়, যে সকল মাছ বহি:রাজ্য থেকে বেশি পরিমাণে আমদানি হয় এগুলো উৎপাদনের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে মৎস্য দপ্তর। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে গলদা চিংড়ি। মূলত এই মাছ সমুদ্রের নোনা জলে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা উৎপাদন করে, যদিও পরবর্তী সময় এরা মিষ্টি জলেও বড় হয়। কিন্তু ডিম ফুটানো থেকে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত সমুদ্রের নোনা জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের গবেষকদের চেষ্টায় এখন রাজ্যেও সফলভাবে গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। রাজধানী আগরতলার কলেজ টিলা এলাকার মৎস্য দপ্তরের ব্রিডিং সেন্টারে গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।
এই কেন্দ্রের সুপারেনটেন্ট হীরক সরকার জানান, বেশ আগে থেকে রাজ্যে সমুদ্রের নোনা জলের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে কিভাবে গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদন করা যায় এই নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। অবশেষে এই কাজে সফলতা আসে এবং এখন নিয়মিত ভাবে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যেগুলো এখান থেকে সংগ্রহ করে নিচ্ছেন রাজ্যের চাষীরা এবং বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে আর্থিক লাভবান হচ্ছে। চাষীরা বুঝতে পেরেছেন যে এই মাছ চাষ করে আর্থিক ভাবে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায় তাই তারা দিন দিন এই মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন, মাছের চারার চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হ্যাচারির চৌবাচ্চার মধ্যে সামুদ্রিক নোনা জলের পরিবেশ তৈরি করে এরমধ্যে চিংড়ির ডিম ফুটানো হচ্ছে এবং চারার লালন পালন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। চাষীদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করে এবছর অনেকটা আগে থেকেই চারা উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এবছর চারা উৎপাদনের কাজ শুরু করা হয়েছে তা আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে।
আগরতলার পাশাপাশি উত্তর জেলায় এবং গোমতী জেলায় রাজ্য সরকারের মৎস দপ্তরের একটি করে চারা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে বলে জানান তিনি। রাজ্যের সব জায়গার পরিবেশ একরকম না হওয়ার জন্য জায়গা বিবেচনায় আলাদা আলাদা পরিস্থিতি বিবেচনা করে গবেষণা এবংউৎপাদনের কাজ চালাতে হচ্ছে। তবে যে জায়গাগুলোতে গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে এর সব কটিতেই সফলভাবে কাজ চলছে বলে জানান। কলেজ টিলা এলাকার হ্যাচারিতে বছরে তিন থেকে চার লাখ গলদা চিংড়ির চারা উৎপাদন করা হয়ে থাকে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবছরও এই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজ্যের যারা বিভিন্ন ধরনের মাছের চারা উৎপাদন করছেন তাদেরকেও গলদা চিংড়ির উৎপাদনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলেও জানান। তা করা সম্ভব হলে আরব ব্যাপক হারে রাজ্যে গলদা চিংড়ির চাষ হবে। যার ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষ তাদের খাবারের পাতে বেশি পরিমাণ গলদা চিংড়ি পাবেন। চারা উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষেরাও যাতে আরো বেশি করে এই মাছ চাষের প্রতি আগ্রহী হন তার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচার ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান হীরক সরকার।
0 মন্তব্যসমূহ