আগরতলা, ৭ জুন: ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরা কোন অংশে কম নয়। এখানে প্রচুর মেধা রয়েছে। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে মেধার কোন অভাব নেই। কিন্তু অনেকেই শুধু সঠিক সুযোগের অভাবে সেই মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে না। আর রাজ্য সরকারের কাজই হচ্ছে সেই মেধাকে সামনে নিয়ে আসতে সঠিক প্ল্যাটফর্ম দেওয়া। ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান রাজ্য সরকার সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কাজ করছে। বুধবার আগরতলায় ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের শংসাপত্র প্রদান ও মৌ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন হওয়া ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট রাজ্যের উন্নয়নে এক উল্লেখযোগ্য পালক। এসব বিষয়ে শুনলেও একটা নষ্টালজিক ভাব উদয় হয়। কারণ এই জগতটা একটু অন্য ধাঁচের হয়। আগে এমন কিছু ছিল না। আর ত্রিপুরাতে এমন ধরণের প্রতিষ্ঠান যে গড়ে উঠবে সেটা ভাবা যায় নি। দিলীপ কুমার, রাজকুমার, ধর্মেন্দ্রদের মতো অভিনেতাদের সময়েও মহারাষ্ট্রে এধরনের ফিল্ম ইন্সটিটিউট ছিল না। পরে অস্কার বিজেতা প্রখ্যাত সত্যজিত রায়ের সম্মানে কোলকাতায় SRFT (সত্যজিত রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউট) গড়ে তুলে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর ২০১৮ সালে ত্রিপুরায় নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মেধার বিকাশে এধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা শুরু করে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আরো বলেন, ত্রিপুরায় ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায় রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের গৌরবময় কৃষ্টি সংস্কৃতি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে চলতি বছর ১লা বৈশাখকে ঘিরে জনজাতিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়। তাই প্রত্যেকেরই তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। এতে জাতি জনজাতির মধ্যে ঐক্যের বন্ধন আরো মজবুত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, প্রতিটি বিষয় বা জিনিস বিজ্ঞানের মতো হতে হবে। তখনই কোন বিষয় রপ্ত করা সহজ হবে। তিনি জানান, আগামীতে ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের জন্যও মিডিয়া কোর্স শেখানো হবে। এর মাধ্যমে আরো সমৃদ্ধ হতে পারবেন সাংবাদিকরা।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরা এখন সব জায়গায় ভালো নাম করছে। তাদের মধ্যে মেধার কোন অভাব নেই। আগামীতেও সবক্ষেত্রে আরো ভালো করতে হবে। ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট থেকে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যেও আগামীতে নিজেদের সেরাটুকু তুলে ধরার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক উদ্যোগে ত্রিপুরায় এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হচ্ছে। আগরতলা রেল স্টেশন আন্তর্জাতিক মানের হতে চলেছে। যেখানে বিমানবন্দরের মতো সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামীতে বড় পরিসরে ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউটকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। যেখানে ডিপ্লোমার পাশাপাশি ডিগ্রি কোর্সের ব্যবস্থা রাখা হবে। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানটির শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে চক্রবর্তী, সত্যজিত রায় ফিল্ম ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা হিমাংশু শেখর কাটুয়া, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভৌমিক। এদিন বিভিন্ন কোর্সের সমাপ্তি শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা। এছাড়া একটি মৌ স্বাক্ষর হয়।
0 মন্তব্যসমূহ