Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যের উন্নয়ন এখন চোখে পড়ছে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১১ জুন: এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন পর আমার বাড়ী এসেছি, অল ইন্ডিয়া ডেন্টাল এসোসিয়েশনের ত্রিপুরা রাজ্য শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে নিজে অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে একথা বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা।
রবিবার সন্ধ্যায় আগরতলার একটি হোটেলে অল ইন্ডিয়া ডেন্টাল এসোসিয়েশনের ত্রিপুরা রাজ্য শাখার তরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এসোসিয়েশনের নেতৃত্ব এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।মুখ্যমন্ত্রীকে উত্তরীয় মানপত্র তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে এক লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।   
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা বলেন, বর্তমান সময়ের রাজ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে এবং এই উন্নয়ন মানুষের চোখে ধরা পড়ছে। আগে যেখানে রাজ্যে মাত্র একটি জাতীয় সড়ক ছিল, এখন রাজ্যে ছয়টি জাতীয় সড়ক হয়েছে। সারাদেশের মধ্যে তৃতীয়তম উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ এই রাজ্যে রয়েছে। একই ভাবে রাজ্য ট্রেন পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। আগে রাজ্যের মানুষ কলকাতা দিল্লি সহ দেশের অন্যান্য বড় শহরে গেলে দ্রুতগতি ট্রেন দেখে ভাবতেন এইসব পরিষেবা শুধু বড় শহরগুলির জন্য, কিন্তু এখন সেইসব রাজ্যের মত ত্রিপুরা রাজ্য ট্রেন পরিষেবার মান উন্নত হয়েছে। প্রায় ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন আগরতলা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। রাজধানী এক্সপ্রেসের মত ট্রেন আগরতলা থেকে নিয়মিত চলাচল করছে। একই ভাবে বিমান পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। রাজ্যে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক বিমানবন্দর স্থাপিত হয়েছে। এমন ভালো এবং আধুনিক বিমানবন্দর অন্য অনেক রাজ্যে নেই। 
 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে গত ৯ বছরে সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সবসময় সেবক হিসেবে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কথাকে স্মরণে রেখে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কাজ করছেন বলে জানান। সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন প্রশংসা শুনার জন্য নয় মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থেকেই একের পর এক কাজ করছেন। এই চেষ্টার জন্যই রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। ইন্ডিয়া ডেন্টাল এসোসিয়েশনের তরফে দিল্লী থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এইসব প্রশংসা পেয়ে বসে থাকলে চলবে না বলেও জানান। 
প্রধানমন্ত্রী নিজেকে সবসময় চৌকিদার হিসেবে তোলে ধরছেন, তিনিও তা মনে রেখে কাজ করে চলছেন। রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করার একের পর এক প্রয়াস চলছে। এই রাজ্যে এত ধরনের বাঁশ রয়েছে তা আগে অনেকেই জানতেন না। এগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে নানা শিল্প কারখানার উপাদান হিসেবে। বিপুল পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে রাজ্যে, এগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। আগামী দিনে রাজ্যের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল। চা সহ অন্যান্য শিল্প এগিয়ে চলছে। রাজ্যের উৎপাদিত বহু পণ্য সামগ্রী এখন শুধু দেশের বিভিন্ন রাজ্যই নয় বিদেশেও পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। সাব্রুমের মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্য হাব হয়ে উঠবে রাজ্য। বাংলাদেশের সঙ্গে রাজ্যের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হচ্ছে, এর জন্য বাধারঘাটে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে। এই ট্রেন যোগাযোগ চালু হয়ে গেলে রাজ্য থেকে ৮-১০ ঘন্টায় কলকাতা পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে।
 পাশাপাশি বর্তমান সময়ের রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য শিক্ষার হাব হয়ে উঠছে। ধর্মনগর, সাব্রুমসহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হচ্ছে। সেই সঙ্গে আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে বলেও জানান তিনি। 
 এদিন একসময়ের সহকর্মীদের পেয়ে তিনি অনেকটাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে বলেন, এখানে এসে মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন পর আমার বাড়ী এসেছি। পাশাপাশি আরো বলেন দীর্ঘ বছর আগে তারা ১০ থেকে ১১ জন মিলে ত্রিপুরা রাজ্যে এই এসোসিয়েশনের সূচনা করেছিলেন, তা এখন অনেক বড় হয়েছে। বসার জায়গা হয়েছে, নিজেরা এখন উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করতে পারছেন। আগামী দিনে যাতে আরো উন্নত হয় এদিকে তার ভাবনা রয়েছে। অতীত স্মৃতি স্মরণ করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন সেই সময় তিনি এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার একটি পক্ষকে জয়ী করার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়েছিল, তারপরও তিনি জয়ী হয়েছিলেন। এখানেই শেষ হয়নি, চাকরিতে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা হয়। তাই তাকে বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে এই বিষয়গুলি ভেবে তিনি বিচলিত হননি। এগুলোকে জীবনের একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন বলে জানান। ফলে এই বিষয়গুলো নিয়ে তার কোন ক্ষোভ নেই।
রাজ্যের ডেন্টাল সার্জনরা নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে খুব ভালো, তবে পাশাপাশি তারা যাতে রাজ্যের অন্যান্য ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হচ্ছে সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা যেন করেন তারা, এই আহ্বানও রাখেন তিনি। ডেন্টাল সার্জনদের অনেকেই পাস করার পর সরকারি চাকরির দিকে না চেয়ে নিজেরাই নিজেদের মত করে কাজ শুরু করেছেন। তারা সমাজের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছেন। তাদেরকে ব্যাঙ্ক ঋণসহ অন্যান্য কিভাবে সহযোগিতা করা যায় এই বিষয়গুলির দিকেও তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান।  
এদিনের এই সংবর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে আগরতলার পাশাপাশি রাজ্যের অন্যান্য জায়গা থেকেও এসোসিয়েশনের সদস্যরা এসে ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সকল সদস্যরা ফটো সেশনে মিলিত হন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ