আগরতলা, ১৭ জুন: কংগ্রেসের অর্থ হচ্ছে কুশাসন, বামের অর্থ হচ্ছে রেশনলুট আর বিজেপির অর্থ হচ্ছে সুশাসন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস। তাই পদ্মকে ফুটিয়ে রেখে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শনিবার শান্তিরবাজারে সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি মাননীয় জে. পি. নাড্ডা। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয় বছরের শাসনে দেশের মানুষের ছবি ও ভাগ্য দুটির পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৪সালের আগের ভারতের নাম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা মধ্যে ছিল। তখন প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন দুর্নীতির খবর প্রকাশ হতো। আকাশ থেকে শুরু করে জমি ও পাতাল সব জায়গাতেই দুর্নীতি করেছে পূর্বতন ইউপিএ সরকার। তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সীমান্তে সড়ক নির্মাণ করার বিপক্ষে ছিলেন। অথচ চীন তাদের সীমান্তে উন্নত সড়ক স্থাপন করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর নরেন্দ্র মোদি সীমান্ত এলাকায় ১৩হাজার কিলোমিটারের বেশি নতুন সড়ক নির্মাণ করে দেশকে সুরক্ষিত করেছেন। সেই সঙ্গে দেশকে দুর্নীতি থেকে টেনে তোলে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে এসেছেন। বংশবাদ থেকে বের করে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে এসেছেন দেশকে। এখন ভোট ব্যাংকের রাজনীতি থেকে সরিয়ে উন্নয়ন ও রিপোর্টকার্ডের শিবিরে এসেছে দেশ। তাই নরেন্দ্র মোদির আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে কাজের ধারা পরিবর্তন এনেছেন। আগে দৈনিক গড়ে ১২কিমি জাতীয় সড়ক তৈরী হতো, এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৯কিমি জাতীয় সড়ক তৈরী হচ্ছে, তাই গত ৯ বছরে দেশে ৫৪হাজার কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ত্রিপুরায় গত ৬বছরে তিনশ কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এই সময় মোট ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে রাজ্যে। একই ভাবে দেশে নতুন করে ৩৭হাজার কিমি রেললাইনকে বৈদ্যুতি করণ করা হয়েছে। আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ ভারত সরকারের টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলপথ দিয়ে খুব দ্রুত ত্রিপুরা থেকে কলকাতা যাওয়ার সম্ভাব্য হবে। স্বাধীনতা সত্তর বছরে সারা ভারতের ৭০টি বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয় বছরের দেশে ৭৪টি নতুন বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন ছয়টি বিমানবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তর পূর্বাঞ্চলে। একই ভাবে গ্রামীন এলাকা গুলি থেকে জানতে শহরে সহজেই যোগাযোগ করা যায় তার জন্য নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
এক দেশের মধ্যে দুটি আলাদা আলাদা পতাকা এবং নিয়মকানুন চলতে পারে না তাই জম্মু-কাশ্মীর থেকে ধারা ৩৭০কে সরিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে দেশের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এখন আত্মনির্ভর দেশ গড়ে তোলার কাজ চলছে, এর অংশ হিসেবে সামরিক অস্ত্র এবং সরঞ্জামের ৯০শতাংশ এখন ভারতেই তৈরী হচ্ছে। চীন ডুকলাম সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে দেশের সেনাবাহিনী সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে তাদের আটকে দিয়েছে।
দেশে এখন সুশাসন চলছে। পূর্বতন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ত রাজীব গান্ধী বলতেন দিল্লী থেকে ১টাকা পাঠালে ৮৫পয়সা কে বা কারা নিয়ে যায় শুধু ১৫পয়সা সুবিধা প্রকৃত মানুষের হাতে পৌঁছায়। কিন্তু এখন সরাসরি মানুষের একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এভাবেই প্রায় ২২লক্ষ ৫০হাজার কোটি টাকা মানুষের একাউন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কমন সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ২২লক্ষ গ্রামে কাজের সংস্থান হয়েছে এবং সরকারি সুবিধার তথ্য জানা যাচ্ছে। খেলনা থেকে শুরু করে গাড়ী তৈরীর ক্ষেত্রে জাপানের মত দেশকে পেছনে ফেলে ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এক সঙ্গে সাড়ে চারশো বিমান কেনার অর্ডার দিয়েছে ভারত। দেশের এই উন্নতি দেখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলছেন ২০৫০সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
তিনি বামেদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তারা যেখানেই দাঁড়ায় সেখানেই বলতে থাকে ভারত গরিব দেশ। তিনি তাদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন করেন যদি ভারত গরিব হয় তবে এতো উন্নতি হচ্ছে কি করে। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, আমেরিকার মত দেশকে পেছনে ফেলে দেশের অর্থনীতি প্রথম স্থানে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সারা দেশে চার কোটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন লক্ষ ঘর ত্রিপুরার নির্মাণ করা হয়েছে। কংগ্রেসের অর্থ হচ্ছে কুশাসন, বামের অর্থ হচ্ছে লুট আর বিজেপির অর্থ হচ্ছে সুশাসন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের উন্নয়নের জন্য একের পর এক কাজ করে চলছেন, ঠিক একই ভাবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা রাজ্যেকে উন্নয়নের দিশায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ দেখে পদ্মকে ফুটিয়ে রেখে উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন জে. পি. নাড্ডা।
অপরদিকে এদিন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা বলেন, দেশ আজ এক ঐতিহাসিক সুযোগের সন্ধিক্ষনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আধুনিক ভারত আজ নতুন ছন্দে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৯বছর সময়কাল দেশের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। সুষ্ঠ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করার জন্য গত ৯বছরে দেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। দেশের এই সময়কাল মানুষের কল্যাণের এবং উন্নয়নের সময়কার হিসেবে চিহ্নিত হবে। দীর্ঘ বছর ধরে উপেক্ষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল এই সময় অভূতপূর্ব উন্নয়নের সুজোগ পেয়েছে। রেল, সড়ক যোগাযোগ, বিমান পরিষেবা থেকে শুরু করে সমস্ত উন্নয়নের ক্ষেত্রে দারুন ভাবে এগিয়েছে। গত ৯বছরে ত্রিপুরা রাজ্যে উন্নয়ন এবং আত্মনির্ভরতার ক্ষেত্রে দারুন সাফল্য এসেছে। কৃষি ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কৃষান যোজনায় ২হাজার টাকা করে রাজ্যের ২লক্ষ ৩৭হাজারের বেশী কৃষক সহায়তা পেয়েছেন। কৃষকরা প্রায় একশ ৩৩কোটি ১৬লক্ষ টাকা পেয়েছেন। ২০১৬সালে রাজ্যের যে কৃষকদের আয় ছিল প্রায় ৬হাজার টাকার সামান্য বেশী, তাদের আয় এখন হয়েছে প্রায় ১৩হাজার ৫৯০ টাকা হয়েছে। রাজ্যের ১oলক্ষ'র বেশী কৃষকদের ফসল বীমার আওতায় আনা হয়েছে। কৃষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৩লক্ষ ৭হাজার কৃষকদের কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় আয়ুষ্মান কার্ড করে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও এই কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পুষণ যোজনায় প্রথমিক স্তরের আড়াই লক্ষ্যের বেশী শিশুদের এবং উচ্চপ্রাথমিক স্তরের দেড় লক্ষ শিশুদের মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্য সর্বরাহ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাবনাকে পথেও করে রাজ্য সরকার মহিলা ও শিশুদের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারী চাকরিতে ৩৩শতাংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। গ্রামীণ মহিলাদের উন্নতির জন্য প্রায় ৫০হাজার স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। তাদের জন্য এগারোশ কোটি টাকার তহবিল ও ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের ১লক্ষ'র বেশী ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। বনাঞ্চলের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য বনাধিকার এক্ট চালু করা হয়েছে। রাজ্যে ১৭টি মডেল একলব্য স্কুল স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ২টি স্কুল ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। রাজ্যের এক হাজারের বেশী স্কুলে ককবরক ভাষাকে বিষয় হিসেবে চালু করা হয়েছে। আগরতলা বিমান বন্দরের নাম করণ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য'র নামে করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ট্যার্মিনাল ভবন তৈরী করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গ্রামীন এলাকায় নতুন নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। জল জীবন মিশনে প্রায় ৪লক্ষ'র বেশী পরিবারকে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য ভারত এখন বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। দেশের কল্যাণের জন্য তাঁকে আরো দীর্ঘ বছর এই দায়িত্বে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই লক্ষ্যকে পাথেও করে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা স্লোগানকে সামনে রেখে রাজ্যও উন্নতির দিকে এগিয়ে চলছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের সভায় জে. পি. নাড্ডা ও মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রভারী ডঃ মহেশ শর্মা, সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডা সম্বিত পাত্র, প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচাৰ্য, প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মন, রাজ্য সভার সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক প্রমুখ। এদিনের এই সভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আগ্রহী মানুষ সকাল থেকেই শান্তিরবাজার স্কুল মাঠের সভা প্রাঙ্গনে এসে হাজির হন।
0 মন্তব্যসমূহ