Advertisement

Responsive Advertisement

সারা ভারত কৃষক ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ ও ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের উদ্যোগে বিধানসভা অভিযান


আগরতলা, ১২জুলাই :  রাজ্য কৃষক সভা, ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ ও ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের আহুত রাজভবন অভিযানে নেমেছিলেন রাজ্যের অন্নদাতারা। তবে অন্নদাতাদের আওয়াজ বিধানসভায় পৌঁছে গিয়েছিল, কেঁপে উঠেছিল বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের বুধবারের প্রথম সেসন। সিপিআইএম দলের পরিসদীয় নেতা জীতেন্দ্র চৌধুরী বুধবার বিধানসভা শুরু হতেই কৃষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য মুলতবি প্রস্তাব আনতে অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেন। অধ্যক্ষ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে প্রশ্ন পত্রের পর্বের পরে কৃষকদের নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন। সেই মত প্রশ্নপত্রের পর্বের পরে জীতেন্দ্র চৌধুরী তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। তিনি ঝুমের সমস্যা,সেচের সমস্যা,বীজের সমস্যা, কীটনাশকের সমস্যা,রেগার সমস্যা,ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কথা তোলার সাথে সাথে সরকার পক্ষের বাধা শুরু হয়ে যায় কিন্তু জিতেন্দ্র চৌধুরীকে দমানো যায়নি। বুধবার রাজভবন অভিযানের মিছিল বিবেকানন্দ ময়দানে পৌঁছানোর পর সেখানে এই বিধানসভা অভিযানের উদ্যোক্তাদের সভা অঘোর দেববর্মা,ভানুলাল সাহা ও নরেশ জমাতিয়াকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমন্ডলীর সাহায্যে শুরু হবার পর বিধানসভা থেকে সেখানে পৌঁছে জিতেন্দ্র চৌধুরী বিধানসভার এই নজিরবিহীন ঘটনা উল্লেখ করেন। বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমোদনের পর আলোচনা শুরুর অধ্যক্ষের মাইক বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। যদিও বিধানসভা অভিযানের কর্মসূচি নানাভাবে বানচাল করার জন্য চেষ্টা শুরু হয় মঙ্গলবার রাত থেকেই। সভার শুরুতেই এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে রাজ্য কৃষক সভার সম্পাদক পবিত্র কর জানান যে গতকাল রাতে বিধানসভা চলছে এই অজুহাতে কর্মসূচি না করার কথা বলাহয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পবিত্র কর পুলিশকে জানিয়ে দেন কর্মসূচির সমস্ত প্রস্তুতি চুড়ান্ত, এখন পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়।এরপর বুধবার পুলিশ বিবেকানন্দ ময়দানের সামনে মিছিলের গতি রোধ করে।সেখানে অন্নদাতাদের সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে পবিত্র কর বলেন রাজ্যের কৃষকদের অবস্থা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।একই অবস্থা জুমিয়াদেরও।কৃষি ক্ষেত্রে কাজ নেই, ফলে ক্ষেত মজুররাও বেকার।দীর্ঘ সময় ধরে বিজেপি আইপি এফ টি সরকার রাজ্যের সরকারের নিরব দর্শকের ভূমিকায়। কৃষক,জুমিয়া ও ক্ষেত মজুররাও সংকটে ।তাই সরকারের ঘুম ভাঙাতে রাজ্য কৃষক সভা,ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ ও ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়ন যৌথভাবে বুধবারের বিধানসভা অভিযানে নেমেছে।ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে কথা বলবেন।বিধানসভা র কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁর সময় হয়নি। পবিত্র কর বলেন বাজেট অধিবেশনকে কাজেলাগাতে এবং সমস্ত বিধানসভা সদস্যদের ওয়াকিবহাল করতেই আমরা এই সময়টি বেছে নিয়েছিলাম।প্রখর রোদ উপেক্ষা করে বিশাল সংখ্যক উপস্থিতির জন্য তিনি সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন রাজ্যের অসংবেদনশীল অহংকারী সরকারের কাছে অন্নদাতাদের কথা শোনার সময় নেই।তিনি বলেন ঝুম চাষীদের অবস্থাও করুণ।খরার জন্য ঝুম চাষীদের কোনো চাষ করার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, রাজ্য সরকারও সহায়তা প্রদান করে নি।সাধারণ সবজি চাষ খরায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফলে বাজারে সবজি অগ্নিমূল্য।সরকারের কোনো হেলদোল নেই।গণমুক্তি পরিষদের সম্পাদক রাধা চরণ দেববর্মা বলেন রাজ্যে কাজ না পেয়ে খেদাছড়া দামছড়া থেকে মানুষ মিজোরাম গিয়ে মুনির(দৈনিক মজুর)কাজ করছেন।তিনি তিপরা ল্যান্ডের দাবিদারদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন এরা বুঝতে পেরেছেন এটা হবে না তাই তাদের ও বিজেপির নেতারা কাজ না করে টাকা উপার্জন করতে অল্প সল্প রেগার কাজেই থাবা বসাচ্ছে।চারদিকে হাহাকার চলছে।নিরন্ন চলেছে।কি করছেন বিরোধী দলের নেতা ও তিপরা ল্যান্ডের সমর্থকরা? রোমান হরফে নিয়ে কি করছেন? ভিলেজ কমিটির নির্বাচন হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন তোলেন রাধাচরণ দেববর্মা।ভিলেজ কাউন্সিল না থাকায় উপজাতিদের কথা বলার সুযোগ নেই এই দৈন্যদশার কথা উল্লেখ করে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ভয়াবহতার কথা উল্লেখকরেন। তিনি বলেন গঙ্গানগর থেকে ৩২ কিমি দুরে দামছড়া,নাতীনমনু প্রভৃতি এলাকার ৪৫টি পাড়ায় বিদ্যুৎ নেই। টাকা দিতে পারে না বলে বহু জায়গায় বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছে।তিনি বলেন রোজগার নেই কোথা থেকে টাকা দেবে? এসব তুলে ধরতেই এই বিধানসভা অভিযানে এসেছি।মুখ্যমন্ত্রীর সময় হল না আমাদের কথা শোনার। তিনি অভিযোগ করেন।ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের সম্পাদক শ্যামল দে বলেন আমরা কেউ ভালো নেই ।গণতন্ত্রকে জবাই করা হচ্ছে। অভিযান সফল করার মাধ্যমে আমরা প্রমান করতে পেরেছি আমাদের রাস্তায় থাকার দীর্ঘ প্রস্তুতি সফল, এই বধিরদের আমাদের কথা শোনাতে বাধ্য করতে তিন সংগঠন বদ্ধপরিকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন ৪০ লক্ষ মানুষের দাবি নিয়ে রাজ্যের অন্নদাতাদের কথা শুনতে রাজী নন সরকার পক্ষের বিধায়করা।কৃষিমন্ত্রী বিদ্যুৎ দফতর চালান।তিনিই পরিষদীয় মন্ত্রী।মঙ্গলবার তাঁর দফতরের বিষয়ে আলোচনার দিন।চেহারা উনমোচিত হবার ভয়ে এমন ভাবে বিধানসভা শুরুর তারিখ করেছেন যেখানে ওনার দফতরের আলোচনার দিন বিধানসভা বন্ধ থাকে।জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন চালাকি করে বাঁচতে পারবেন না, জবাব দিতেই হবে।এবারের বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন পরিকল্পনাহীন বাজেট।পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কিছুই নেই।কৃষি, শিক্ষা,স্বাস্থ্যতে বাজেট থেকে প্রাপ্তি শূন্যের কোঠায় নেমেছে।বামফ্রন্টসরকারের সময় নানা প্রতিকৃলতার মধ্যেও বহুমুখী চেষ্টা হতো।কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রেগার ভয়াবহতার ভবিষ্যত রূপ তুলে ধরে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন মুখ্যমন্ত্রীর যোজনা আনা হয়েছে বাজেটে যেখানে ভয়াবহতার স্বীকারোক্তি রয়েছে তার সাথে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সিন্ডিকেট যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী বাইক বাহিনী নিয়ন্ত্রণ যোজনা যুক্ত করার পরামর্শ দেন।সভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি সনদ সহ স্মারকলিপি পৌঁছে দেবার জন্য কৃষক সভা,গণমুক্তি পরিষদ ও ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়নের নেতৃত্ব তা তুলে দেন জিতেন্দ্র চৌধুরীর হাতে।       
   
        

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ