আগরতলা, ১৬ জুলাই: সমাজের জন্য কাজ করতে হলে রাজনীতির প্রয়োজন হয় না। মানুষের সুখে দুঃখে, আপদে বিপদে পাশে থাকাই আসল সামাজিক কাজ। এতে মানুষের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর এই কাজটুকু করতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মনেপ্রাণে এটাই চাইছেন। ভালো কাজ করলে ভারতীয় জনতা পার্টির পাশে থাকবে মানুষ। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে মানুষের স্বার্থে কাজ করাটাই আসল। রবিবার আগরতলার নেতাজি স্কুলে আয়োজিত যোগদান সভায় কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
৮ বড়দোয়ালি মন্ডলের উদ্যোগে এদিন এই যোগদান সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন। বিশেষ করে রাজ্য রাজনীতির কিছু নেতার দলবদল ইস্যুতে তিনি বলেন, এদের বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আরশোলার জীবনচক্রের মতো। আজকে কংগ্রেস, কালকে বিজেপি, পরের দিন তৃণমূল, এরপর আবার কংগ্রেস। এদের জীবনচক্র এভাবেই চলবে। আগামীদিনে কি হবে কেউ জানে না। এধরণের লোককে মানুষ বিশ্বাস করেছিল। তাদের কাছে টিকিট পাওয়াটাই আসল। টিকিট পেয়ে গেলে মানুষ এমনিতেই আসবে। এটাই তাদের ধারণা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের আসল শত্রু মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, টুটি টিপে ধরা, বদলি করা - এটাই ছিল তাদের ৩৫ বছরের শাসন কালে রুটিন। আন্দোলনের নামে গনতন্ত্রকে ব্যবহার করে উশৃঙ্খলতা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। সতর্ক থাকতে হবে ৩৫ বছরের সিপিএম-র সংস্কৃতি যাতে ভারতীয় জনতা পার্টিতে প্রবেশ না করে। ডা: সাহা জানান, পূর্বতন সরকার ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋনের বোঝা বর্তমান সরকারের মাথার উপর রেখে গেছে। তারা আবার দাবি করে এক বছরের মধ্যে সমস্ত কিছু করে নেওয়ার। যেটা কোনভাবে সম্ভব নয়। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত, এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এবং এক মণ্ডল শ্রেষ্ঠ মণ্ডল গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সম্পর্কের সাথে সমর্থন এই নীতিতে কাজ করতে দলীয় কার্যকর্তাদের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
যোগদান সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে মণ্ডল নেতৃত্ব ও কার্যকর্তাদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। শুধু গ্রামীন এলাকা নয়, এবার শহরের বুকেও বড় ধরনের ভাঙ্গন ধরাল ভারতীয় জনতা পার্টি। এই সভায় ১৩০৯ জন ভোটারের যোগদান তারই প্রমান তুলে ধরে। আগামী দিনে এই ঢেউ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সুনামির মত আছড়ে পড়বে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিরোধী দলগুলি। ফলের আশা না করে কাজ করতে বিশ্বাসী বিজেপি দল।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার, রাজ্যেও বিজেপি সরকার শাসন করছে। এতে সবদিক দিয়ে লাভবান হচ্ছেন রাজ্যের আমজনতা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংস ঘটনা পরিলক্ষিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ত্রিপুরায় এসে গনতন্ত্র কাকে বলে দেখে যাওয়ার আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের পতাকা ছাড়া আর অন্য কোন দলের পতাকা তুলেতে দেওয়া হয় না। এই রাজ্যে সেটা হয় না। গত বিধানসভা নির্বাচন তারই প্রমান। গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতাসীন হয়েছে। বিধানসভায় না পেরে কুচক্ররী সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি সরকার। নোংরা রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় বিজেপি। এই পার্টি সবসময় স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিধানসভায় বিনা পয়সায় র্যাম্প ওয়াক দেখেছে রাজ্যের মানুষ। অপর এক বিধায়ক কলের জল এনে গঙ্গা জল বলে বিধানসভায় ছিটিয়ে দিন। এরআগেও সেই বিধায়ক মানদণ্ড নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এটাই তাদের সংস্কৃতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনীতির সংজ্ঞাই পাল্টে দিয়েছেন। সিপিএমের সংস্কৃতি যাতে বিজেপিতে প্রবেশ না করে সেনিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিন সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া দত্ত, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, যুব মোর্চার প্রদেশ সভাপতি নবাদল বনিক, ৮ বড়দোয়ালির প্রভারী সুব্রত চক্রবর্তী, সদর আরবান জেলা সভাপতি অসীম ভট্টাচার্য, মন্ডল সভাপতি সঞ্জয় সাহা। সভায় বিরোধী দল ছেড়ে ১৩০৯ জন ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা তলে সামিল হন। তাদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচনের আগে খোদ শহরের বুকে বিরোধী শিবিরে বড়সড় ভাঙ্গনে নিঃসন্দেহে শাসক দলের জন্য বাড়তি অক্সিজেন হয়ে পড়লো।
0 মন্তব্যসমূহ