Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যে উদ্যান জাত পণ্য ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে, ক্রেতা-বিক্রেতা সেমিনারে বললেন মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ৩ জুলাই : প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনে বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্য দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাই রাজ্যে টায়ার কারখানা স্থাপনের জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা।
 সোমবার থেকে আগরতলায় শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপি রাজ্যে উৎপাদিত উদ্যানজাত পন্যের বিপণন বিষয়ক জাতীয় স্তরের ক্রেতা-বিক্রেতা সেমিনার। রাজধানী আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে আয়োজিত এই সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই তথ্যগুলি তুলে ধরেন তিনি।
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরো বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ হচ্ছে কৃষি। একই ভাবে ভারতের জিডিপি'র বুনিয়াদ নির্ভর করে কৃষির উপর। ভারতের বুনিয়াদ কৃষি ভিত্তিক হওয়ার জন্য কোভিড মহামারীর সময় দারুন সুবিধা পেয়েছে। যেসব দেশের বুনিয়াদ শিল্পভিত্তিক ছিল কোভিডকালে তাদেরকে সমস্যায় পড়তে হয়, কিন্তু তখন ভারতকে তেমন কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। পাশাপাশি রাজ্যের কৃষি এবং উদ্যানজাত ফসলের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের রাবার বাঁশসহ মাটিরতলায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ভরপুর ভান্ডার রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের উৎপাদিত উদ্যান জাত ফসল এখন বিপুল পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কুইন আনারসকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে রাজ্যের ফল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে আনারস বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, সেই সঙ্গে কাঁঠাল সুগন্ধি লেবু এবং সুগন্ধি চালও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক রাবার। কেরালার পরেই রাবার উৎপাদনের ত্রিপুরা রাজ্যের অবস্থান, দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিমাণ রাবার উৎপাদন হয় এ রাজ্যে। রাজ্যে এখন বছরে প্রায় ৯৪ হাজার মেট্রিক টন রাবার উৎপাদন হচ্ছে এবং প্রায় ৭০হেক্টর জমিতে রাবার চাষ হচ্ছে। রাজ্যে এখন গুণগত মানসম্পন্ন রাবার উৎপাদন করার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে টায়ার কারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে রাজ্যে রাবার থেকে বেশ কিছু পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে যেগুলো বাংলাদেশসহ অন্যান্য জায়গায় রপ্তানি হচ্ছে। রাবার গাছের কাঠ দিয়ে উন্নত মানের আসবাবপত্র তৈরি হয়, এগুলোকেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি বিদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে।
 রাবারের মতো এই রাজ্যে বাঁশেরও বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রায় ২১ জাতের বাঁশ উৎপাদিত হয়। ত্রিপুরায় উৎপাদিত বাঁশের টাইলস নতুন পার্লামেন্ট ভবনে লাগানো হয়েছে। এই টাইলস গুলির গুণগত মান ভালো এবং দেখতে সুন্দর হওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য জায়গার গুরুত্বপূর্ণ ভবন গুলিতে এখন এগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে।
 সেইসঙ্গে ফল ও ফুল চাষের জন্যও রাজ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ১২ হাজার হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে ফল চাষ হচ্ছে। একই ভাবে ১৬ হাজার হেক্টরের বেশি পরিমাণ জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে, ১,১৬৩ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। বিদেশি জাতের ৪১৯ টি ফুল এখানে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে আনারস যাতে গুণগত মান বজায় রেখে বিদেশে রপ্তানি করা যায় এর জন্য অত্যাধুনিক একটি প্যাক হাউস গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষিজাত পণ্য সহজ ভাবে বাজারজাত করার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৩ টি সোলার ভিত্তিক কোল্ড স্টোরে চালু করা হয়েছে। কৃষকদের আয় যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য রাজ্য সরকার একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যে সকল রপ্তানিকারকরা রাজ্যে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাদেরকে রাজ্য সরকারের তরফে সব ধরনের সহায়তা করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নীতি প্রকল্পে বছরের ৬হাজার টাকা করে পাচ্ছেন রাজ্যের কৃষকরা। এ রাজ্যে প্রায় তিন লক্ষ কৃষক এই সুবিধা পাচ্ছেন, সব মিলিয়ে বছরে তাদের ৫,৫৩কোটি ১৬লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের রাজ্যের কৃষকদের গড় আয় ছিল প্রায় ছয় হাজার টাকা, বর্তমান সরকারের তৎপরতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্যের কৃষকদের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৫১০টাকা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, নতুন করে এ ধরনের কেন্দ্র আরো গড়ে তোলা হবে। 
 মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগে রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সমস্যা ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যকে হীরা মডেল দিয়েছেন। এর ফলে নতুন করে ছয়টি নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি করা হচ্ছে, আরো চারটি নতুন জাতীয় সড়কের কাজ শুরু হবে। রেলপথ এমনকি বিমান পথে দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের রাজ্য, দেশের মধ্যে তৃতীয় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এরাজ্যে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর যখন চালু হবে তখন গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে রাজ্য। সব মিলিয়ে যে সকল রপ্তানি কারকরা পন্য সামগ্রী রপ্তানি করতে আগ্রহী তাদের সামনে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
ত্রিপুরা সরকারের উদ্যান ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ ডিরেক্টরেট এবং ভারত সরকারের এগ্রিকালচারাল এন্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তথা এপিইডিএ-র যৌথ উদ্যোগে হচ্ছে এই সেমিনার। 
 উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ, কৃষি ও কৃষক কল্যান দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, এপিইডিএ-র ডেপুটি জেনেরাল ম্যানেজার বিদ্যুৎ বড়ুয়া, এপিইডিএ-র ডেপুটি জেনেরাল ম্যানেজার সুনিতা রাই, ত্রিপুরা সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের ডিরেক্টর ড. শরদিন্দু দাস, উদ্যান ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের ডিরেক্টর ড. ফনি ভূষণ জামাতিয়া প্রমুখ। এদিনের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে মোট ৩০ জন রপ্তানীকারক অংশ নিয়ে ছিল পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ১৭০ জন কৃষক অংশ নেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ