আগরতলা, ২ জুলাই: আগে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ধারণা ছিল ক্লাব মানেই আতঙ্ক, কিন্তু এখন এই ভাবনার পরিবর্তন হয়েছে। এমন পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, এর ফলে সমাজের চেহারায় সুস্থ্য ও সুন্দর পরিবর্তন আসে। এই অভিমত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহার।
রবিবার রাজধানী আগরতলার জয়নগর এলাকার যুবসমাজ ক্লাবের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। এই শিবিরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বর্তমান সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজ্যের প্রায় সব ক্লাব রক্তদানসহ নানা সামাজিক কাজে যুক্ত হয়েছে। ঠিক এই ভাবে যুবসমাজ ক্লাবও সারা বছর ধরে নানা সামাজিক কর্মসূচি করছে তাদের এইসব কাজের প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি'র পাশাপাশি রাজ্য সরকার ও আগরতলা পুর নিগম সমাজের সুস্থ্য পরিবর্তন চায়। ক্ষমতার পরিবর্তন দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, ক্ষমতার মধ্যে থেকেই সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব। রাজ্যের ২৫, ৩০বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে সকলের নজরে আসে, কিভাবে নেশার কবলে ডুবে ছিল গোটা যুব সমাজ। এই জায়গা থেকে যুব সমাজকে বের করে আনা বড় কঠিন কাজ। কিন্তু বর্তমান সরকার থেমে নেই, এই কাজকে প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন এই সমস্ত কাজে কোন ছাড় দেওয়া চলবে না। তাই রাজ্য সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং নিয়মিত ভাবে পুলিশের হাতে নেশা সামগ্রী ধরা পড়ছে। সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে এই রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম পরিমানে নেশা সামগ্রী আটক করা এবং ধ্বংস করা হয়েছে সম্প্রতি। এই কাজ শুধু পুলিশ এবং সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্লাবসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার কাজে যাতে ক্লাবগুলো এগিয়ে আসে, তাদের এই সব কাজে সব সময় পাশে রয়েছে সরকার। এই কাজ সকলে এগিয়ে এসে করতে হবে, আর তা না হলে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে।
পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন ক্লাব চালানো খুব সহজ কাজ নয়, একটি মিনি সরকার চালানোর মতো কঠিন কাজ হচ্ছে ক্লাব পরিচালনা করা। তবে ক্লাব গুলি যখন পক্ষপাতহীন ভাবে কোন সমস্যার সমাধান করে দেয় তখন সাধারণ মানুষ আদালতের খরচ থেকে রেহাই পেয়ে যান। পাশাপাশি এদিন ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে যারা এসেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। এইসব রক্তদাতাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের রক্তদাতারাও উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবেন বলে জানান। রাজ্যে যত শতাংশ মানুষ রয়েছেন তার ১ শতাংশ রক্ত মজুদ থাকা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এই জন্য রাজ্যর সাধারণ মানুষের প্রতি আহবান রেখেছিলেন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ রক্তদানে এগিয়ে এসেছেন বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৪২ হাজার প্যাকেট রক্ত মজুদ রয়েছে বলেও এদিন জানান তিনি।
এদিন আগরতলা পুর নিগমের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত যুব সমাজ পুকুরের সৌন্দর্যায়নের কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আসন্ন দূর্গা পূজার আগেই যুব সমাজ জলাশয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আগরতলা পুর নিগম কর্তৃপক্ষ।
রবিবার যুবসমাজ ক্লাবের উদ্যোগে রবীন্দ্র নজরুল সন্ধ্যা এবং রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। সকালে রক্তদান শিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, এলাকার কর্পোরেটর তথা মেয়র ইন কাউন্সিলর তুষার কান্তি ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। এদিন যুবসমাজ ক্লাব আয়োজিত রক্তদান শিবিরে রক্তদাতাদের সাথে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাদের অভিনন্দন জানান।
0 মন্তব্যসমূহ