আগরতলা, ১অগাস্ট: বিশ্বের সবচেয়ে সুস্বাদু আম হিসেবে পরিচিত ভারতীয় আলফানসো, তাই একে আমের রাজা বলা হয়, তবে এই আমাকে এখন পাশে রেখে এখন জাপানের মিয়াজাকিনিয়ে জোর চর্চা বিশ্বজুড়ে। এই মিয়াজাকি হোক বা আমেরিকান পার্লমার, ব্রহ্মদেশের রাঙ্গুই বা থাল্যান্ডের কিং অফ চাকাপার্ট, ব্ল্যাকস্টোন, ব্যানানা ম্যাংগো, ভারতীয় সুস্বাদু আম্রপালি বা বারো মাস ফলনশীল কাটিমোহন আম দেখতে এবং এগুলির স্বাদ নেওয়ার জন্য আপনাকে এর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটতে হবে না। নানা দেশের ও নানা জাতের আমের স্বাদ এখন নিতে পারবেন রাজ্যে বসেই। তাও আবার একই জায়গায়। গন্ডাছড়া এলাকার বাসিন্দা শিক্ষিত যুব প্রজ্ঞান চাকমা এই বাগান গড়ে তোলেছেন।
সব মিলিয়ে বির্তমানে প্রায় ২৫ জাতের আম গাছ রয়েছে তার বাগানে বলে তিনি জানান। আরো নতুন নতুন জাতের আম গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বের সব জাতের আম গাছ দিয়ে তার বাগানকে সমৃদ্ধ করা তার স্বপ্ন। এবছর আমের মরসুম প্রায় শেষ লগ্নে এসে পৌঁছেছে, এর পরও তার বাগানের কিছু কিছু গাছে ঝুলছে আম। আবার কিছু গাছে নতুন করে মুকুল আসছে।
কোলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী করেছেন। কোলকাতায় পড়াকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে ঘুরে নানা জাতের আম গাছ সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে ছোট বেলা থেকেই আম তার খুব প্রিয় তাই তিনি পরিকল্পনা করেন নানা জাতের আম গাছ দিয়ে একটি বাগান করবেন। তাই তিনি এই বাগানটি গড়ে তোলেছেন। ১০ বিঘা জমিতে আম বাগান গড়ে তোলেছেন, বাগানে মোট ৮০০ আম গাছ রয়েছে। পরিত্যক্ত টিলাভূমিতে বাগান গড়ার পাশাপাশি তিনি নিজেও পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন বাগানে। পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুন্দর একটি বাগান বাড়ি করে তুলেছেন। আম চাষ করলেও তার পড়াশোনার বিষয়বস্তু ফাইআর্টস থেকে সরে দাঁড়াননি। এই বাড়িতেই ছোট পরিসরে স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি ঘরের আশেপাশে ফাইবারের কিছু মূর্তি গড়ে রেখেছেন। তিনি জানান গত তিন বছরে তার বাগানের পরিচিতি সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তার আম বাগান দেখতে। আগামী দিনে দর্শকদের সুবিধা এবং বিনোদনের কথা চিন্তা করে আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। ধীরে ধীরে এগুলো সম্পূর্ণ করবেন। এখন মানুষ তার বাগানে গিয়ে ঘুরে দেখেন নিজেদের পছন্দমত আম সংগ্রহ করতে পারেন, আবার কেউ চাইলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান।
সেই সঙ্গে বাগানে রয়েছে হাইব্রিড জাতের কুল, আমড়া, ড্রাগন ফলসহ নানা জাতের কলা। এবছর বাগানে প্রায় ৫হাজার কেজি আমের ফলন হয়েছে।
সফল আম চাষী হয়ে উঠার জন্য প্রথাগত কোন প্রশিক্ষণ নেননি, বাড়িতে বসে মোবাইলের মাধ্যমে ইউটিউবে দেশ বিদেশের আম চাষের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন এবং এগুলি তার বাগানে প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে সফলতা এসেছে বলেও জানান তিনি।
এখন তিনি নিজে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি তার বাগানে আরো ৮ থেকে ১০জন লোক কাজ করে সংসার প্রতিপালন করছে। আম বিক্রির পাশাপাশি তিনি এখন আমের চারা তৈরি করেও বিক্রি করছেন। এবছর প্রায় ৩ হাজার আমের চারা বিক্রি করেছেন বলেও জানান।
তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গন্ডাছড়া এলাকার বহু যুবক-যুবতী নতুন করে আম বাগান গড়ে তুলছেন। যুব প্রজন্মের কাছে তার আহ্বান, তারা যে কাজ ভালো ভাবে করতে পারেন বা যে কাজ করার প্রতি তাদের আগ্রহ রয়েছে সেই কাজটি মনোযোগের সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই।
0 মন্তব্যসমূহ