আগরতলা, ২৮জুলাই: এক সঙ্গে চার হাজারের বেশি ভোটার বিজেপিতে যোগ দিলেন, আপনারা সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপির মূল কাজ হচ্ছে মানুষের উন্নয়ন, তাই সবসময় মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। সারা দেশের মানুষও বুঝতে পেরেছেন শুধুমাত্র বিজেপি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাই সারাদেশে মানুষ বিজেপি পতাকা দলে শামিল করছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বক্সনগর এলাকায় এক যোগদান সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথাগুলো বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহা।
এদিন বিজেপির উদ্যোগে বক্সনগরে এক মেগা যোগদান সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রায় ৪হাজার ভোটার কংগ্রেস সিপিএম তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে এদিন বিজেপি দলে যোগদান করেন। তাদের হাতের দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিজেপি ভারতের সর্ববৃহৎ দল, যার সদস্য সংখ্যা ১৭কোটির বেশী। বিশ্বের আর কোন দলের এতো সংখ্যাক সদস্য নেই। প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার দেশকে উন্নয়নের সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে চলছেন, তাই অন্যান্যদল ছেড়ে ভোটাররা প্রতিদিন বিজেপিতে সামিল হচ্ছেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ হোক বা সিপাহীজলা, সব জায়গাতেই মানুষের মধ্যে বিজেপিকে ঘিরে স্পন্দন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মানুষ এখন আর অন্য কোন কথা শুনতে রাজি নন। কারণ মানুষ কংগ্রেস সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখেছে, এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির কাজ দেখে মানুষ আস্থা হয়েছে, তারা বুঝতে পেরেছেন যদি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, দেশকে বাঁচাতে ও শক্তিশালী করতে হয় তবে বিজেপিকে মজবুত করতে হবে। বিশেষ করে দলিত, পিছিয়ে পড়া ও মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে ও শক্তিশালী করতে হলে বিজেপি ছাড়া অন্য কোন দলের পক্ষে সম্ভব নয়। বিজেপির মূল লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়ন, প্রধানমন্ত্রীও দেশের উন্নয়নের জন্য সব কাজ করছেন। তিনি যখনই বিদেশে যান বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বস বলে সম্বোধন করছেন, অনেকে আবার পায়ে ধরে নমস্কার করছেন।
রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন সময় জাতির জনজাতি এবং সংখ্যালঘু মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি চক্র। তাই এদিকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের লক্ষ্যে এক্ট ইস্ট পলিসি গ্রহণ করেছেন তা অনস্বীকার্য। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ছয়টি নতুন জাতীয় সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, আরো নতুন নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি করা হবে। সারা রাজ্যকে সংযুক্ত করার জন্য একের পর এক কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবাকেও গতিশীল করা হয়েছে। ভারতের তৃতীয় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগকারী লাইন ত্রিপুরা রাজ্যে রয়েছে। রেল পরিষেবার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, আগরতলা থেকে ১২টি এক্সপ্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত ভাবে চলাচল করছে। উন্নয়ন কিভাবে করতে হয় তা নরেন্দ্র মোদি নিজে প্রমাণ করে দিয়েছেন। আগরতলা বিমানবন্দর প্রাচীন বিমানবন্দর গুলির মধ্যে একটি। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য এই বিমানবন্দর স্থাপন করেছিলেন, তাকে সম্মান জানিয়ে এর নাম করন এমবিবি বিমানবন্দর দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের একটি টার্মিনাল ভবন স্থাপন করে নিজে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সকলে যদি এক চিন্তাধারায় থাকা হয় তাহলে, এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এবং এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ে তোলা খুব সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী সকল অংশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। কিষান সম্মান নিধির টাকা আবারও প্রদান করা হয়েছে, এই প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যের প্রায় আড়াই লাখ কৃষক ইতিমধ্যে পেয়েছেন। এর জন্য প্রায় ৫৫৩ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সরকার প্রথম থেকে কাজ করছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যেখানে রাজ্যের কৃষকদের আয় মাত্র ৬ হাজার টাকা ছিল এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৩ হাজার টাকার বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় ১০ লাখের বেশি কৃষককে নিয়ে আসা হয়েছে। এই বিমার বেশিরভাগ টাকা সরকার দিচ্ছে, এর জন্য সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছে। কৃষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩ লাখের বেশি কৃষকের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে এখন পর্যন্ত ১৩ লক্ষের বেশি আয়ুষ্মান কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। একই ভাবে রাজ্যের মহিলাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে মহিলাদের জন্য। রাজ্যের গ্রামীণ অংশের মহিলাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য ৫০ হাজারের বেশি স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। প্রায় চার লক্ষের বেশি মহিলারা এই দলগুলোতে যুক্ত হয়েছেন। স্কুলছাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নবম শ্রেণী থেকে পাঠরত ছাত্রীদের সারা রাজ্য নিজের প্রায় এক লাখ বাই সাইকেল বিনামূল্য বিতরণ করা হয়েছে। জনজাতি ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে রাজ্যে নতুন করে ১৭ টি একলব্য স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্কুল চালু হয়ে গিয়েছে। ককবরক ভাষাকে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়েছে ১,০০০ এর বেশি স্কুলে ককবরক বিষয় চালু করা হয়েছে। ৫ লক্ষের বেশি পরিবারকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামীন এলাকায় নতুন করে রাস্তাঘাট হয়েছে, পানীয় জল এবং বাড়ি বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বক্সনগর এলাকার রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে তবে এই রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার জন্য এদিন নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
একইভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি রেল পরিষেবা স্থাপনের জন্য ভারতীয় অংশে পরিকাঠামো নির্মাণ হয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশের অংশের নির্মাণ কাজ চলছে, এবছরের শেষ লগ্নে এই রাস্তা চালু হয়ে যাবে বলে আশা করেন। সেই সঙ্গে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। সবমিলিয়ে সরকার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বক্সনগর বাজার সংলগ্ন নজরুল মুক্তাঙ্গনে আয়োজিত এদিনের এই সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ