আগরতলা, ২১ জুলাই: শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত সার্বিক উন্নয়নে খুবই আন্তরিক রাজ্য সরকার। বর্তমান রাজ্য সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি। সরকার চাইছে সবক্ষেত্রে আরো উন্নয়ন। এজন্য রাজ্যের বিদ্যালয় স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা এবং ছেলেমেয়েদের মূল্যবোধ ও গুনগত শিক্ষা প্রদানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে চলেছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে স্মার্ট ক্লাশ ডিজিটাল পদক্ষেপ হিসেবে স্কুলে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। শুক্রবার আগরতলার উমাকান্ত একাডেমী স্কুল থেকে রাজ্যের ৭৫২টি সরকারি স্কুলে স্মার্ট ক্লাশরুম প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট ক্লাসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ আরো বৃদ্ধি করা। বর্তমানে রাজ্যে ১০০টি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন করে আরও ২৫ টি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে আনা হবে। সবদিক দিয়ে গুণগত মান বজায় রেখে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। এদিন স্মার্ট ক্লাশ প্রকল্পের পাশাপাশি নিপুন ত্রিপুরার বুকলেট, বিদ্যাজ্যোতি ক্লাস ও ড্যাশবোর্ডের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গাছের চারায় জল দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ করে রিমোটের বোতাম টিপে স্মার্ট ক্লাশের সুচনা করেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে নতুন নতুন বিষয় সামনে আসছে। অনেক কিছুর উন্নতি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১ - ২২ এবং ২০২২ - ২৩ অর্থবর্ষের জন্য ৮১২টি স্মার্ট ক্লাশের মঞ্জুরি দিয়েছে। এরমধ্যে আজ ৭৫২টি সূচনা করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৭৪৪টি স্কুল এবং ৮টি প্রাথমিক স্কুলে এই স্মার্ট ক্লাশ চালু হয়েছে। প্রতিটি স্মার্ট ক্লাশের পেছনে ব্যয় হবে আনুমানিক ২ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। এই স্মার্ট ক্লাশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করা। এজন্য শিক্ষকদেরও সময়ের সাথে সাথে আপডেট থাকতে হবে। তবেই ছাত্রছাত্রীদের আপডেট করতে পারবেন তারা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরা রাজ্যকে হিরা মডেল উপহার দিয়েছেন। এর সুফল হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্য ইন্টারনেটের তৃতীয় শক্তিশালী পরিষেবা পেয়ে যাচ্ছে। এতে রাজ্যে ইন্টারনেট খরচ অনেক কমে গেছে। ২০১৩ - ১৪ সালে ১ জিবি ডাটার জন্য অন্তত ৩০০ টাকা খরচ হতো। সেই জায়গায় এখন খরচ দাড়িয়েছে প্রতি জিবি ৭ থেকে ১০ টাকায়। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার যেমন কাজ করছে তেমনি রাজ্য সরকারও একই দিশায় কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে ১০০টি স্কুল রয়েছে। এছাড়া আরও ২৫টি স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হবে। রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মধ্যে মেধা ও প্রতিভার অভাব নেই। রাজ্যের ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে নাম করছেন। সায়েন্টিস্ট থেকে শুরু করে আইটি সেক্টর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, টিচার, প্রফেসর, রিসার্চার সবক্ষেত্রেই ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রতিটি ব্লক এলাকায় মডেল স্কুল তৈরি করা হবে। শিক্ষা খাতে কিভাবে অর্থ ব্যয় করা হবে সেটার খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে বেশকিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারিভাবে আরো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ২০২২ - ২৩ অর্থ ছাত্রীদের ৪৪ হাজার ৬০০টি বাই সাইকেল বিতরন করা হয়েছে। ২৩ - ২৪ অর্থবর্ষে এজন্য ৯ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় (নতুন প্রকল্প) দ্বাদশ মান পরীক্ষায় প্রথম ১০০ জন ছাত্রীকে স্কুটি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে পড়াশুনায় আরো অনুপ্রাণিত হবে তারা।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী, শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা চাঁদনি চন্দ্রন সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
0 মন্তব্যসমূহ