আগরতলা: হাতি-মানুষ সংঘর্ষ রাজ্যে দীর্ঘ বছরের পুরানো। বিশেষ করে তেলিয়ামুড়ার মহকুমার কল্যাণপুর, মুঙ্গিয়াকামী এবং আশেপাশের এলাকায় বন্য হাতির উপর্যুপরি আক্রমনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা অনেক সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে।
এবারের বিধানসভা অধিবেশনেও বিভিন্ন জনবসতি এলাকায় বন্য হাতির উপর্যুপরি আক্রম থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
বনদপ্তর হাতি-মানুষ সংঘর্ষকে কমানোর জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামে প্রভাবিত জনসংখ্যাকে লক্ষ্য করে সচেতনতা আরো বাড়ানো হবে। ভেলিয়ামুরা ফরেস্ট সাব-ডিভিশনের অধীনে মুসিয়াকামির ৩৭ মাইল এলাকায় দুই হেক্টর এলাকা জুড়ে একটি ক্যাম্প তৈরী করা হয়েছে। সেখানে চারটি পালিত হাতি রয়েছে। এগুলিকে উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে হাতি-মানুষ সংঘর্ষ মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে।
গ্রামে বন্য হাতির প্রবেশের প্রতিরোধে পর্যাপ্ত সংখ্যায় হাতি তাড়ানোর সরঞ্জাম তথা কমব্যাট কিট দিয়ে হাতির উৎপাত মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যেসব গ্রামে বন্য হাতির দল হানা দেয় এই গ্রাম গুলিতে স্বেচ্ছা সেবক দল নিয়োগ করা হয়েছে। স্বেচ্ছা সেবক দলে আরো বেশী সংখ্যায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের অন্তর্ভুক্তি করা হবে।
যৌথ বনায়ন কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে হাতির চলাচল, হাতির ঝুঁকি ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি উন্নত তথ্য নেটওয়ার্ক কার্যকর করা হচ্ছে যাতে মানুষ ও হাতি উভয়ের সুরক্ষা করা যায়।
বন্য হাতিদের প্রাথমিক সতর্কতা এবং বন্য হাতিদের অবস্থান ও গতিবিধি ট্র্যাকিং করার জন্য রেডিও কলারিং করা হয়েছে যা পর্যায়ক্রমে আরো করা হবে। সেই সঙ্গে হাতি-মানুষ সংঘর্ষ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার কাজ চলছে।
হাতি-মানুষ সংঘর্ষকে কমানোর জন্য হাতি প্রতিরোধক পরিখা, সোলার ফেন্সিং, গ্রামীণ স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা, বন্য হাতিদের চলাচলের করিডোর গুলিকে সংযোগ এবং বন্য হাতির আচরণগত দিকগুলি অন্বেষণের জন্য গবেষণা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াল্ড ত্রিপুরা ফাউন্ডেশনের সহ-সম্পাদক চিরঞ্জিত নাথ বলেন, হাতি-মানুষ সংঘর্ষের জন্য একাধিক কারণ রয়েছে। এর অন্যতম একটি হচ্ছে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। আগে বন্য হাতির দলগুলো তাদের সুবিধামতো বন্য করিডোর ধরে অবাদে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেত খাবারের সন্ধানে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক বন্য হাতির দৈনিক এক কুন্টাইলের বেশি খাবারের প্রয়োজন। এগুলো তারা সংগ্রহ করে জঙ্গলের গাছ লতাপাতা থেকে।
তাই যখনই একটা জায়গায় খাবারের স্বল্পতা দেখা দিতো তখন তারা জঙ্গলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেত। কিন্তু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ফলে ত্রিপুরার অংশে খাবার অভাব দেখা দিলেও তারা অপর প্রান্তে যেতে পারছে না। একই ভাবে তারা কাঁটাতারের বেড়ার অপরপ্রান্তে যে সকল হাতি বর্তমানে রয়েছে তারাও এপ্রান্তে আসতে পারছে না। অপরদিকে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার কারণে দিন দিন জঙ্গলের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জঙ্গল ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এর ফলে বন্যহাতিদের প্রায়শই খাদ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে। ক্ষুধার তাড়নায় তারা বাধ্য হয়ে লোকালয়ে এসে মানুষের বাড়িঘর এবং ফসলি জমিতে আক্রমণ চালাচ্ছে। তাই হাতি-মানুষ সংঘর্ষ বন্ধ করতে হলে জঙ্গলে বন্য হাতিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ