আগরতলা, ২০ জুলাই: রাজ্য সরকার শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুলে যাতে মূল্যবোধ এবং গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। একটা রাজ্যে শিক্ষার মান যখন বাড়বে তখন রাজ্যের মুখও উজ্জ্বল হয়। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের মেধা কোন অংশে কম নয়। কোনদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই তারা। তাদের জন্য দরকার শুধু একটা সঠিক প্ল্যাটফর্ম। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুঞ্জবনস্থিত ইনস্টিটিউট অফ এডভান্সড স্টাডিজ ইন এডুকেশনের (আইএএসই) হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষন এই দুটো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা একে অপরের পরিপূরক। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল মোবাইল বা ল্যাপটপে পড়াশুনা করা যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে ওল্ড ইজ গোল্ড। বইয়ের পাতায় যতক্ষণ পড়া হবে না ততক্ষণ বিষয়ের গভীরে পৌঁছানো যাবে না। এতে মেধার উৎকর্ষতার বিকাশ ঘটে। যা মোবাইল বা ল্যাপটপ থেকে আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৩৩ বছর বাদে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি বা জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা সম্ভব হয়েছে। কারণ সময়ের সাথে এটার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়েছে। এখন সারা পৃথিবী এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামীদিনে পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয় থাকবে যাদের জ্ঞান রয়েছে। কাজেই জ্ঞানের যাতে সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ বিকাশ হয় তারজন্যই দেশে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। আগে বিদেশ থেকেও অনেক মানুষ নালন্দা, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে আসতো। তখনো ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা ছিল। আর এখনো রয়েছে।
তবে এদিন ফের একবার উদ্বেগের সুরেই টিউশন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখনো প্রাইভেট টিউশনির জন্য অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে দৌড়ঝাঁপ করছেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় এই প্রবণতা অধিক পরিলক্ষিত হয়। এতে অনেক ছেলেমেয়ে চাপের মধ্যে পড়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই সরকার এই প্রবনতা রোধ করতে চিন্তাভাবনা করছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে কিভাবে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবোধ ও গুণগত মানের শিক্ষা দেওয়া যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু শিক্ষক যথাসময়ে আসেন না এবং সময়ের আগেই চলে যান। মনে রাখতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে হলে কি কি গুণাবলী থাকতে হবে। কারণ একজন আদর্শ শিক্ষকের কথায় অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের একজন আদর্শ মানুষ। সমাজে শিক্ষকদের স্থান সবার উপরে। পিতামাতা শিক্ষক হলে পরিচয় দিতেও গর্ববোধ হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যে মধুর সম্পর্ক সেটা আর কোন জায়গায় পরিলক্ষিত হয়না। তিনি জানান, আইএএসই তথা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে এবারের বাজেটে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে উদয়পুরের নেতাজী সুভাষ মহাবিদ্যালয়ের উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকা এবং এমবিবি কলেজের সায়েন্স বিল্ডিংয়ের জন্য ৭৭ কোটি টাকার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারিভাবে আরো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলছে। চলতি বছর থেকেই ডেন্টাল মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তি ও পাঠনপাঠন শুরু হয়ে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞান দান করা যায় তবে আমাদের ঐতিহ্য বজায় থাকবে। শিক্ষার মান্নয়োনন মানে একটি রাজ্যের মানোন্নয়ন। তাই রাজ্য সরকার চায় ত্রিপুরাকে একটি এডুকেশন হাব হিসেবে গড়ে তুলতে। আগামীতে আমবাসায় বেসরকারিভাবে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা যায় কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিটিই'র চেয়ারপার্সন নীলিমা ভগবতী, শিক্ষা দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা, আইএএসই'র প্রিন্সিপাল রত্না রায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। অনুষ্ঠানে এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষকদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে হীরক জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে একটি স্মরণিকার আবরণ উন্মোচন করা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ