Advertisement

Responsive Advertisement

আগরতলায় পালিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী


আগারতলা, ৮আগস্ট: আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদার ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী palon করা হয়।
এদিন জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে আয়োজন করা হয়। প্রথম পর্বে, দুপুর দেড়টা নাগাদ আগরতলার ঐতিহাসিক গেদু মিঞা মসজিদে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার শাস্তি ও মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এরপর দ্বিতীয়পর্বে, বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ স্বাগত বক্তব্যসহ অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তুলে ধরেন মিশনের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান জনাব মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী। এরপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপস্থিত সকলে। তারপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী ২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত লিখিত বাণী সকলের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণ করা হয়। এই দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মৈত্রী সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব স্বপন কুমার ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ড. দেবব্ৰত দেবরায়, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ও গবেষক ড. আশিষ কুমার বৈদ্য, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ও গবেষক ড.মুজাহিদ রহমান, আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশন প্রথম সচিব মোঃ আল আমীন এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ।
সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার সমাপনী বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৭৫-এ নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহিদ সদস্যবৃন্দ, ৩০ লাখ শহিদ, সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের মহান আত্নত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে অসামান্য অবদানের জন্য যে নারীর ত্যাগ, অবদান ও অনুপ্রেরণায় ছিলেন উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত ও লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় সংকল্প, তিনি হলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সকল অনুপ্রেরণার উৎস। বঙ্গমাতা সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর সাথে ছায়ার মতো অবস্থান করেছেন, অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুর সকল কর্মকান্ডে সমর্থন ও সাহস যুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সহচর হিসাবে বিদ্যমান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বঙ্গমাতা ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ী মহীয়সী নারী যিনি পরিবারে স্ত্রী ও মাতার ভূমিকায় কোমলতা আর দেশের প্রয়োজনে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কঠোরতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ছিলেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব একদিকে যেমন শক্ত হাতে সংসার ও সন্তানদের সামলিয়েছিলেন, তেমনি নিজের ব্যক্তিগত চাহিদাকে অতিক্রম করে স্বামীর সংগ্রামের সহযোদ্ধা হিসাবে নীরবে ছায়াসঙ্গীর মতো যুগিয়েছেন সাহস ও উদ্দীপনা। জাতির পিতার সহধর্মিণী হয়েও বঙ্গমাতা সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। নির্লোভ, পরোপকারী ও নিরহংকার মুজিবপত্নীর মাঝে বাঙালি মায়ের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পার্থিব বিত্ত-বৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনো তাঁকে প্রভাবিত করেনি। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্থ আর প্রচারবিমুখ এই মহিয়সী নারীর জীবনব্যাপী ত্যাগ ও অবদান থেকে গেছে লোক চক্ষুর আড়ালে, তাই আজকের এই দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করব আত্মত্যাগে ভরপুর তাঁর জীবন ও কর্মকে।
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী-পুত্র-পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়ের সাথে তিনি ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। জাতির ইতিহাসে যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বঙ্গমাতা আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর রেখে যাওয়া নীতি ও আদর্শ আমাদেরকে ভবিষ্যৎ চলার পথে শক্তি ও সাহস যোগাবে। মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাদায়ী এই মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার আদর্শ দেশের নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার সুশীল সমাজের বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আগরতলা মিশনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এই মিশনের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ