আগরতলা, ২ আগস্ট: আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে বুথ পর্যায়ে আরো গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতেও বুথ স্তরে বিশেষ নজর দিতে হবে। ভারতীয় জনতা পার্টি একটি সুশৃঙ্খল দল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি থেকেও আলাদা। সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি করতে তৃণমূল স্তরেও নজর রাখতে হবে। পার্টির কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
বুধবার ধলাই জেলার কমলপুর মণ্ডল ও সুরমা মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত পৃথক দুটি সাংগঠনিক সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজনীতির সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, পানীয়জলের সংযোগ এবং শৌচালয়ের সুবিধা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। উন্নয়ন নিয়ে কোন রাজনীতি নয়। আমার বুথ একটি শক্তিশালী বুথ - এই ভাবনায় কাজ করতে হবে। দলের কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাদের ত্রিপুরা সফরের সময় সংগঠনের বিষয়ে কথা বলতে পারেন, তবে একজন পঞ্চায়েত সদস্য কেন সেটা করতে পারবেন না? প্রধানমন্ত্রী রাজ্য ও দেশের জন্য কী কী কাজ করেছেন সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে বুথ স্তরে সাংগঠনিক সভা করা খুবই প্রয়োজন। আর সেটা হবে দলকে শক্তিশালী করার সবচেয়ে সহজ উপায়।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার সামাজিক ভাতা হিসেবে ২ হাজার টাকা দিচ্ছে, যা অন্য কোনও রাজ্য দেয় না। তাই রাজ্যের মানুষকে এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে হবে দলের কার্যকর্তাদের। বেনিফিসিয়ারিদের সম্পর্কে বুথভিত্তিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভারতীয় জনতা পার্টি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ দল এবং অন্য দলগুলির চাইতে আলাদা। যদি আমরা বিভিন্ন সভা এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি তারিখ অনুযায়ী নোট নিতে পারি, তবে এটা খুবই উপকারে আসবে। দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতারাও সেটা করে থাকেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, বুথ শক্তিশালী করার কাজে বিশেষ নজর দিতে হবে। এই সরকার গঠনের পর সরকারি কর্মচারীদের প্রথমে ৩% ডিএ দেওয়া হয়েছিল। তারপর ৫% এবং ১২% সহ প্রায় ২০% ডিএ প্রদান করা হয়েছিল সরকারি কর্মচারীদের। এবিষয়ে কার্যকর্তাদের প্রয়োজন মানুষকে সচেতন করা। এই সরকার রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। খুব শীঘ্রই স্পেশাল এক্সিকিউটিভ এবং প্রায় ১ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে। রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ১,৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরো প্রায় ১০০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। আর এই দীর্ঘ সময়ে কোনও দুর্নীতি ছাড়াই চলছে সরকার। ত্রিপুরা সরকারও সেই একই পথ অনুসরণ করে রাজ্যের কল্যাণে কাজ করছে। এই সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। গত নির্বাচন এত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছিল যে কেউ ভাবতে পারেননি। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। এই সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে কথা কম, কাজ বেশি করা। এই নীতি নিয়েই কার্যকর্তাদের প্রতিটি বুথে অন্তত একটি বাড়িতে গিয়ে মানুষের সমস্যার কথা শোনা উচিত। ত্রিপুরাকে একটি মেডিকেল হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে সরকার। রাজ্যে জাতীয় মহাসড়ক এবং রেলপথে যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরাকে হিরা মডেল উপহার দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কার্যকর্তাদের প্রয়োজন বুথ স্তরে এই ধরনের সমস্ত কাজের তথ্য আরো বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া। আমার বুথ, শক্তিশালী বুথ - এই ভাবনাকে মূলমন্ত্র করে কাজ করতে হবে। সিন্ডিকেট তৈরি না করে রাজ্যের সামগ্রিক কল্যাণে নিবেদিতভাবে কাজ করতে আত্মনিয়োগ করতে হবে সকলকে।
এদিকে সুরমা মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত সভাতেও সাংগঠনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন উভয় সাংগঠনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেবরায়, বিধায়কগণ সহ জেলা ও মন্ডল স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব।
0 মন্তব্যসমূহ