Advertisement

Responsive Advertisement

ইউনিটি মলে রাজ্যের হস্ততাঁত ও হস্তকার শিল্প সামগ্রী বাজারজাত করা হবে: শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৩ অগাস্ট : রাজ্যের হস্ততাঁত ও হস্তকাক শিল্প সামগ্রীর প্রদর্শনী ও বাজারজাত করার জন্য গড়ে তোলা হবে ইউনিটি মল। ইউনিটি মলটি নির্মাণ করার জন্য ইতিমধ্যেই আমতলি-খয়েরপুর বাইপাস সংলগ্ন জুটমিল কমপ্লেক্সে ৩৬০ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। মলটিতে থাকবে ৮০টি শোরুম। ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রকের সহায়তায় মলটি নির্মাণে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্তনা চাকমা। শিল্পমন্ত্রী জানান, ইউনিটি মনে এক জেলা - এক পণ্যসমূহের উৎপাদিত পণ্যগুলিরও প্রদর্শন ও বাজারজাত করার ব্যবস্থা থাকবে। রাজ্যের নিজস্ব হস্ততাঁত ও হস্তকারুশিল্প ও স্থানীয় পণ্যগুলির বিপণনে সহায়তা করবে। বেকার যুবক-যুবতী, কারিগর, মৃৎশিল্পী এবং তাঁতিরা তাদের তৈরি পণ্যগুলির বিপণনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। ইউনিটি মলটি রাজ্যে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি অর্থনীতিকে সাবলীল করতেও বিশেষ ভূমিকা নেবে। সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরার শিল্পনগরীগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১,২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এরজন্য ডিপিআর তৈরি সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজগুলি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যান্ডের সহায়তাতেই ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশন উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঁশের ভ্যালু
চেইনের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্য সরকার সে অনুযায়ী উনকোটি জেলার সোনামুখী গ্রামে একটি ইন্টিগ্রেটেড ব্যাম্বু পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি ৮টি প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রও গড়ে তোলা হবে। তিনি জানান, সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাম্বু মিশন এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের একটি প্রতিনিধিদল ত্রিপুরা সফরে এসে বোধজংনগর এবং কুমারঘাটের শিল্পনগরীতে বর্তমান ইউনিটগুলি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ভারত থেকে পণ্য পরিবহণের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি আদেশও জারি করেছে। এই আদেশমূলে বাংলাদেশ সরকার ত্রিপুরার জন্য ৪টি ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট রুট নোটিফায়েড করেছে। রুটগুলি হলো চট্টগ্রাম বন্দর আখাউড়া- আগরতলা, মংলা বন্দর আখাউড়া - আগরতলা, চট্টগ্রাম বন্দর বিবিরবাজার - শ্রীমন্তপুর এবং মংলা বন্দর বিবিরবাজার শ্রীমন্তপুর। এরফলে ভারতবর্ষের অন্যান্য সমুদ্র বন্দর থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থেকে আগরতলা হয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যেও পণ্য পরিবহণ করা যেতে পারবে। এরফলে এসব রাজ্যগুলিতে ব্যবসা বাণিজ্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি পণ্য পরিবহন বায় হ্রাস সহ দ্রুত ও সহজে পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, গত ৫ বছরে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বোধজংনগরে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে একটি বড় মাপের রাবার থ্রেড ইউনিট। তাছাড়াও ত্রিপুরায় টিএমটি বার/রড/ফ্ল্যাটস ইউনিট, বাশের ফ্লোর টাইলস, চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, চালের মিল, ফ্লাওয়ার মিল, রাবার ভিত্তিক মাঝারি শিল্প ইউনিটগুলি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পউদ্যোগসমূহ। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে মোট নিবন্ধিত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৩২,৭২৮টি। এগুলির মধ্যে ৩১,৯৪৩টি ক্ষুদ্র, ৭৩৩টি ছোট এবং ৫২টি মাঝারি আকারের শিল্প ইউনিট রয়েছে। তিনি জানান, গত ৫ বছরে রাজ্যে বিনিয়োগকারী এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৫৬। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১,০৯১ কোটি টাকা। বাশ, রাবার কাঠ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য শিল্পে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে শিল্পমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি জানান, শিল্প স্থাপনে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা থেকে স্বউদ্যোগী ১০০ জন যুবকে বোধজংনগর এবং আরকেনগর শিল্পনগরী পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা জানান, মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১ লক্ষ যুবক-যুবতীর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন টেকনোলজি, ইন্টারনেট অব থিংস, স্মার্ট সিটি সার্ভিসেস, স্মার্ট এগ্রিকালচার ইত্যাদি সহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ থাকবে যাতে রাজ্যে এবং বহিরাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়। নির্মাণ শ্রমিক প্রশিক্ষণ প্রকল্পে ৮০১ জন রাজমিস্ত্রি, রডমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্রামবার সহ অন্যানা লিপিবদ্ধ শ্রমিকদের বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সংকল্প প্রকল্পে ৮০ জন রিয়াৎ অভিবাসীর প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে এবং ৪০ জনের প্রশিক্ষণ চলছে। পুনর্বাসন প্রাপ্ত উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই ও গোমতী জেলায় এই প্রকল্পে আরও ৩০০ জনের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। তাছাড়াও জল জীবন মিশনে ৪০০ জনের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। সংকল্প প্রকল্প ফেজ-২ তে ভারত সরকার ৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে এবং প্রথম কিস্তিতে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। জাতীয় শিক্ষানবীশ প্রোমোশন প্রকল্প পোর্টালে এখন পর্যন্ত ১৯৬০ জন প্রশিক্ষণার্থী, ২০৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ৮৬০টি শিক্ষানবীশ যুক্ত হয়েছে। উপজাতি যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অর্থানুকুলো আইটিইএস (ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবল সার্ভিসেস) প্রশিক্ষণ, হসপিটালিটি ট্যুরিজম, ফুড প্রসেসিং ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৯২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সমাজ কল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় ১৭৪ জন দিব্যাঙ্গজনকে রিটেল, আইটিইএস ক্ষেত্রে এবং ২৪০ জন দুস্থ মহিলাকে লাইফ স্কিল ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী জানান, জল জীবন মিশন প্রকল্পে ৩৪০ জনকে প্লামবার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকট্রিশিয়ান টেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটি থেকে ২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব কে এম শেঠী, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ডাইরেক্টরেটের অধিকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ