আগরতলা, ৪ অগাস্ট: "আমাদের শক্তি আগরতলায় নয়, আমাদের শক্তি গ্রাম গরিব এবং পাহাড়ে। তাই সরকার গ্রাম গরিব কৃষক ও পাহাড়ে গুরুত্ব দিচ্ছে"। এই অভিমত রাজ্যের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ। শুক্রবার রাজ্যে প্রথমবারের মতো রেড পাম ওয়েল গাছের বাণিজ্যিক চাষ কর্মসূচির সূচনা করতে গিয়ে এই অভিমত ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
ভারতের অভ্যন্তরীণ ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা পাম তেল আমদানি করতে হয়। তেলের এই চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের মধ্যে পাম তেল চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। এবছর ২৫ জুলাই থেকে শুরু করে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত রেড পাম ওয়েল গাছ লাগানোর মেগা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে শুক্রবার ত্রিপুরা রাজ্যেও রেড পাম অয়েল বাগান গড়ার কর্মসূচীর সূচনা করা হয়েছে। এদিন রাজ্যের পশ্চিম জেলার অন্তর্গত বেলবাড়ি কৃষি মহকুমা শান্তিনগরে পাম গাছের চারা লাগানোর মধ্য দিয়ে রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের রতন লাল নাথ এই কর্মসূচীর সূচনা করেন। উদ্যান এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণ ডিরেক্টরেটের উদ্যোগে আয়োজিত এদিনের এই কর্মসূচিতে কৃষি মন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলই, এম ডি সি গণেশ দেববর্মা, কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, ডিরেক্টর ড. শরদিন্দু দাস, উদ্যান এবং মৃত্তিকা সংরক্ষণ বিভাগের ডিরেক্টর ড. ফনি ভূষণ জমাতিয়া, পতঞ্জলি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের এডভাইজার ড. সুভাষ ভট্টাচার্য প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, রাজ্যের ইতিহাসে শান্তিনগরে এদিনের পাম গাছ লাগানোর অনুষ্ঠানটি ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে। কারণ এদিন সারা দেশের সঙ্গে রাজ্যেও বাণিজ্যিক ভাবে পাম চাষ শুরু হলো।বিশেষ করে ইঞ্জিনীয়ার রোশন দেববর্মার নাম দেশ এর ১১টি রাজ্যের এক লক্ষ এর বেশি চাষীদের সঙ্গে যুক্ত হলো। এই এলাকার আরো ১৯ জন চাষী রেড পাম ওয়েল চাষের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যে সকল ফসল চাষ করলে দ্রুত আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায় এ সকল ফসল চাষের দিকে চাষীদের নজর দিতে হবে। পাশাপাশি তিনি উদাহরণ টেনে বলেন রাবার চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় হয়। অথচ পাম তেল চাষ করলে সমপরিমাণ জমিতে প্রতিবছর প্রায় দুই লক্ষ টাকা আয় হবে। গাছের উৎপাদিত সব ফল পতঞ্জলি কিনে নেবে, এই বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। এমনকি এই ফলের সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করে দেবে সরকার বলেও এদিন মন্ত্রী জানান। দেশের তেলের চাহিদার বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বছরে প্রায় ২৫৭ লক্ষ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে দেশে, এর প্রায় অর্ধেক তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এর জন্য বছরে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। দেশের মোট তেলের চাহিদার ৫৬ শতাংশ পূরণ হয় পাম তেলের মাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে দেশকে স্বনির্ভর করতে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন পাম তেল উৎপাদন করার জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। দেশের ১১ টি রাজ্যে পাম তেল গাছের চাষ খুব ভালো হয়ে থাকে, এর মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্য রয়েছে।
পাম চাষের জন্য গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যকে প্রায় ১০ কোটি ১৭ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এবছর কেন্দ্র আরও প্রায় ৩৩ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করেছে এই চাষের জন্য কিন্তু এই টাকাগুলি খরচ করা সম্ভব হয়নি পাম তেল গাছের চারা না পাওয়ার জন্য। এবছর থেকে দ্রুত গতিতে চাষ শুরু হবে।
অপরদিকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পতঞ্জলি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের এডভাইজার ড. সুভাষ ভট্টাচার্য বলেন, উত্তর পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্যে তাদের উদ্যোগে রেড অয়েল পাম গাছের চাষ হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্যের পাঁচটি জেলাতে পাম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের তারা সব ধরনের সহযোগিতা করবেন এবং উৎপাদিত ফসল তারা নিজেরাই কিনে নেবেন। রাজ্যের আগামী দিনে একটি পাম তেল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। উত্তর পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ আসাম ও মিজোরামে তাদের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে।
অপরদিকে উদ্যোগী চাষী রোশন দেববর্মা এই বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলেও দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান করছে। এছাড়া ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি দেখে পাম তেল গাছ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি আশাবাদী আগামী দিনে এর থেকেও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিরা একটি করে পাম গাছের চারা রোপন করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প অনুসারে রাজ্য সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তর রাজ্যে বাণিজ্যিক ভাবে পাম চাষের লক্ষ্যে পতঞ্জলি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং গোদরেজ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করেছে। এর অংশ হিসেবে এদিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী ধারী জনজাতি যুবক রোশন দেববর্মার মোট দুই হেক্টর জমিতে রেড পাম ওয়েল বাগান সম্পূর্ণ বিরামূল্যে গড়ে দেওয়া হবে। প্রতি হেক্টরে মোট ১৪৫টি করে গাছ লাগানো হবে। এই গাছগুলো লাগানোর পাঁচ বছরের মাথায় ফলন শুরু হবে। এই সময়ে চাষীদের যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় তার জন্য সরকারের তরফে এক লক্ষ টাকা করে সহায়তা করা হবে। শনিবার ধলাই জেলার আমবাসা এলাকায় আরো একটি বাগান গড়ে তোলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। এই বাগানটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে গোদরেজ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সব মিলিয়ে আগামী দিনের রাজ্যের অর্থনীতিতে পাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে অভিমত উপস্থিত সকলের।
0 মন্তব্যসমূহ