আগরতলা, ২৪ আগস্ট: শুধু ত্রিপুরাতে নয়, সারা দেশের মধ্যে উশৃঙ্খল একটি পার্টির নাম কংগ্রেস। শৃঙ্খলার সাথে কিভাবে উশৃঙ্খল হতে হয় সেটার নাম কংগ্রেস পার্টি। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এরা যেকোন কিছু করতে পারে। তাইতো নিজেদের এত লোক খুন, অগ্নিসংযোগ, মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন হলেও এরা সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলাতে দ্বিধাবোধ করে না। নির্বাচনের আগে এরা একে অপরের দলীয় কার্যালয় থেকে ফ্ল্যাগ ফেস্টুন বের করে। আগামী দিনে সিপিএম কংগ্রেসকে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে।
বৃহস্পতিবার বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের কুলুবাড়িতে ভারতীয় জনতা পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত যোগদান সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এভাবেই কংগ্রেস সিপিএমকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আসন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী তফাজ্জল হোসেনের সমর্থনে এই বিশাল সভার আয়োজন করা হয়। এদিন দিনের সেরা ও উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকলো কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিল্লাল মিয়ার নেতৃত্বে ৮ হাজার ভোটারের ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করা। যা উপনির্বাচনের দোরগোড়ায় কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবিরে প্রবল ধাক্কা বইয়ে আনলো।
যোগদান সভায় অন্যতম বক্তার ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া কংগ্রেস নেতা বিল্লাল মিয়ার প্রশংসা করেন এবং দলে তাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, কংগ্রেস পার্টি এখন ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু ট্রেলার দেখছেন। আসল পিকচার এখনো বাকি। এই কংগ্রেসের হাত ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ অনেক নাটক দেখেছেন। রাজ্যের মানুষ সিপিএমকে মন থেকে কখনো ভালো পায় না। শুধু এদের জন্য রাজ্যের মানুষ এতদিন তাদের অত্যাচার নিপীড়ন সয়েছে। এরা কত মানুষকে খুন করেছে, ধর্ষণ করেছে, অগ্নিসংযোগ করেছে। আগে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এই রাজ্যের মানুষ। কিন্তু ২০১৮তে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এমন ঘটনা আর নেই রাজ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। মা বোনেরা নিরাপদে রাস্তায় বের হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সব কা সাথ, সব কা বিকাশের দিশায় এগিয়ে চলছে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নির্দেশনায় ইসরোর বিজ্ঞানীদের হাত ধরে চাঁদের মাটিতে সফলভাবে পা রাখতে পেরেছে ভারত। গরীব মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় এই সরকার সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়নেও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। ইতিমধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষকে আয়ুষ্মান কার্ড দেওয়া হয়েছে। এবারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা প্রকল্পে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই উন্নয়নকে ধরে রাখতে হলে আগামী ৫ তারিখ উপনির্বাচনে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী তফাজ্জল হোসেনকে বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা আরো বলেন, এই সরকারের কাজের প্রতি সকলকে বিশ্বাস রাখতে হবে। বিজেপি প্রার্থী জয়ী হলে আগামীতে বক্সনগর এলাকার আরো উন্নয়ন হবে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, পিএম আবাস যোজনায় বক্সনগরে ৬ হাজার ৬৭২টি ঘরের অনুমোদন হয়েছে। জল জীবন মিশনে প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষের বাড়িতে পাইপ লাইনে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই এলাকায় ২ হাজার টাকা করে সামাজিক ভাতা পাচ্ছেন আরো ৫ হাজার ৮৬১ জন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার স্বচ্ছতার সরকার। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই মানুষের জন্য কাজ করছে সরকার। স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এক্ট ইস্ট পলিসির কারণে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি দ্রুত উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর হিরা মডেলের জন্য ত্রিপুরার বিকাশ দ্রুত হচ্ছে। জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে ইন্টারনেট পরিষেবা, বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রেল যোগাযোগ উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১৮ নির্বাচনে সিপিএমের আসন ছিল ১৬টি। ২০২৩এ সেটা হয়েছে ১১টি। আর এবারের উপনির্বাচনে ১১ থেকে ১০ এ গিয়ে দাঁড়াবে তাদের আসন। আগামীতে সিপিএম কংগ্রেসকে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন যাদের হাতে এত লোক খুন হলো কেন তাদের সাথে হাত মেলানো? রাজ্যের মানুষের কাছে কি জবাব দেবে তারা? অথচ ভারতীয় জনতা পার্টি মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষের জন্য চিন্তা করে। মানুষের জন্য, তাদের সুবিধা অসুবিধা সমাধানে কাজ করাই এই দলের আসল লক্ষ্য।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান রাখেন আগামী ৫ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে বক্সনগর ও ধনপুর আসনে বিজেপি মনোনীত দুই প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে ৮ তারিখ হোলি খেলা হবে বলেও জানান তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য প্রভারী ড: মহেশ শর্মা, প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক পাপিয়া দত্ত, পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, জেলা সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য সহ দলের মন্ডল ও রাজ্য স্তরের নেতৃত্ব। এদিন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতা বিল্লাল মিয়া কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করেন। এই ঐতিহাসিক যোগদান সভায় এদিন বিরোধী শিবিরের প্রায় ৮ হাজার ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা তলে সামিল হন।
0 মন্তব্যসমূহ