Advertisement

Responsive Advertisement

আগরতলা আখাউড়া রেল পথে ট্রেন এসে পৌঁছলো সীমান্ত পর্যন্ত

আগরতলা, ১৪ সেপ্টেম্বর : আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগের কাজ আরো একধাপ এগিয়ে গেল। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ রেলের পরীক্ষামূলক একটি ট্রেন নির্বিঘ্নে সীমান্তের ওপারের রেলপথ পরিদর্শন করে গেল। এখন অপেক্ষার পালা কবে ভারতীয় অংশে ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দিলেই নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসে পৌঁছবে বাংলাদেশের পরীক্ষামূলক ট্রেন। সীমান্তের এপারে ট্রেন পৌঁছানোর অপেক্ষায় এখন প্রহর গুনছেন রাজ্যবাসী।
সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক রেল করিডোর হতে যাচ্ছে রাজ্য। এই লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আগরতলা ও বাংলাদেশের আখাউড়ার মধ্যে রেল পথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অংশে রেলপথের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। তাই বাংলাদেশের আখাউড়া ও গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন হয় একটি ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে বৃহস্পতিবার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশে বাংলাদেশ ভূখণ্ড পর্যন্ত এসে পৌঁছলো। বাংলাদেশ রেলের এই পরীক্ষামূলক ট্রেনটিতে ইঞ্জিনের পাশাপাশি তিনটি বগিও ছিল। এই বগিগুলিতে করে বাংলাদেশ রেলের আধিকারিকরা এসেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প'র বাংলাদেশ অংশের প্রকল্প আধিকারিক আবু জাফর মিয়া। পরীক্ষামূলক ট্রেনটি সীমান্তে এসে দাঁড়ালে তিনিসহ অন্যান্য আধিকারিকরা নিচে নেমে আসেন এবং ট্রেন লাইনসহ অন্যান্যসামগ্রী পর্যবেক্ষণ করেন। পরে আবু জাফর মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আগরতলা-আখাউড়া রেল পথ নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের অংশে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় বৃহস্পতিবার পরীক্ষা মূলক ভাবে সীমান্ত পর্যন্ত ট্রেনচালানো সম্ভব হয়েছে। পরীক্ষা মূলক ভাবে ট্রেন চালিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হলো সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে এবং রাস্তাটি নিয়মিত ভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন একটি যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি হচ্ছে। এর ফলে উভয় দেশ অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
 প্রায় ১৫কিমি দীর্ঘ এই রেলপথে ভারতীয় অংশ রয়েছে সাড়ে পাঁচ কিমি এবং বাকি ১০কিমি বাংলাদেশের অংশে রয়েছে। ভারতীয় অংশের আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে সাড়ে তিন কিমি রাস্তা হচ্ছে এলিভেটেড করিডোর অর্থাৎ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে। বাকি প্রায় দুই কিমি রাস্তা তৈরি হচ্ছে মাটিতে। এলিভেটেড করিডোরের কাজ এখনো সিংহভাগ বাকি রয়েছে। ভারতীয় অংশে মাটির মধ্যে যে টুকু জায়গায় রেলপথ রয়েছে এই অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তের আগে ভারতীয় অংশে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিন্তপুর স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন পাতার কাজও হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় অংশে রেলের রাস্তাটি ব্রডগেজ যেহেতু বাংলাদেশের অংশের রেলপথ এখনো মিটার গেজ তাই নিশ্চিন্তপুর রেলস্টেশনে ব্রডগেজ ও মিটার গেজ দুই ধরনের ট্রেক বসানো হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের অংশে রেলপথ স্থাপন করা হয়েছে ডুয়েল গেজে। 
 ভারতীয় অংশে যেহেতু কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি তাই এখনো নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুত এই রাস্তাটিতে ট্রেন চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ইতিমধ্যে ভারত সরকার নিশ্চিন্তপুর রেল স্টেশনকে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম রেলওয়ে ইমিগ্রেশন স্টেশন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই রেলপথের নির্মাণ কাজে ভারতীয় অংশের দায়িত্বে রয়েছে রেলের নির্মাণ সংস্থা ইরকন এবং বাংলাদেশের অংশে রেল পথ নির্মাণের কাজ করছে ভারতের আরো একটি নির্মাণ সংস্থা টেক্স মেকো।
রেলওয়ে সূত্রের খবর আনুষ্ঠানিক ভাবে এই রেলপট্টি চালু হয়ে গেলে প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য বুঝায় কন্টেইনার বাংলাদেশের ট্রেনের মাধ্যমে নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে নিয়ে আসা হবে, সেখান থেকে ট্রাকে করে এই পণ্যগুলো উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হবে। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর এর মধ্যে ট্রেন লাইন পাতার কাজ শেষ হয়ে গেলে এইসব পণ্য সরাসরি ট্রেনের মাধ্যমে অন্যান্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তখন উভয় দেশের মধ্যে চালানো হবে যাত্রী ট্রেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ