Advertisement

Responsive Advertisement

ছামনুতে বিরোধী শিবিরের ৯২ পরিবারের ২৬৯ জন ভোটারের বিজেপিতে যোগদান

আগরতলা, ২৬ সেপ্টেম্বর: রাজ্যের সকল অংশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। বিশেষ করে জনজাতি অংশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে এই সরকার। রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে চায় এডিসির সার্বিক উন্নয়ন করার। এজন্য এডিসির বাজেটও অনেক পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনজাতিদের প্রত্যেকটি গোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এডিসিতে ৫০টি আসন করার জন্য দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। 
মঙ্গলবার ধলাই জেলার লংতরাইভ্যালি মহকুমার ছামনু স্কুল মাঠে আয়োজিত জন আশীর্বাদ যাত্রায় জনতার উদ্দেশ্যে সম্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। সভায় বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। সভায় বিরোধী শিবির ছেড়ে প্রচুর সংখ্যায় মানুষ বিজেপিতে সামিল হন। 
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এরআগেও লংতরাইভ্যালিতে আসতে হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তা নিশিকান্ত চাকমাকে নৃশংস খুনের পর এখানে আসতে হয়েছে। সেই খুনের দৃশ্য দেখে চোখে জল এসেছিল। আর এবার বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমার আমন্ত্রণে আসতে হয়েছে। এখানে এসে এত লোক সমাগম দেখে খুবই আপ্লুত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে বক্সনগর ও ধনপুরে উপনির্বাচন হয়েছিল। যে কারণে নিয়মিত সেই দুই জায়গায় যেতে হয়েছে। পদযাত্রা থেকে শুরু করে ডোর টু ডোর প্রচার, সভা সমাবেশে অংশ নিতে হয়েছে। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়েছে। আর দুই কেন্দ্রেই বিরোধী প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা। 
সভায় কমিউনিস্ট জমানার কালো অধ্যায় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা সময় ভোট আসলেই বিজেপি কর্মীদের নিশানা করা হতো। নৃশংসভাবে খুন করা হতো, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হতো, মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হতো। কারণ হিংসাই ছিল ওই পার্টির মূল উদ্দেশ্য। গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরে ২৫ বছর শাসন করেছে তারা। কংগ্রেস জমানাতেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশীর্বাদে ভারতীয় জনতা পার্টি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০২৩ সালের নির্বাচন কোন হিংসা ছাড়াই একেবারে শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা হয়। যা প্রথমবার প্রত্যক্ষ করেছে রাজ্য। মানুষ শান্তি শৃঙ্খলা চায়। মানুষ উশৃঙ্খল আচরণ চায় না। আর এই সরকার শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাজনীতির পরিকাঠামো পাল্টে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় কাজ করছে এই সরকারও। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনও শান্তিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিভাবে এটা সম্ভব হয়েছে - সেটা এবার দিল্লিতে গিয়েও আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। 
এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এই পার্টির চিন্তাধারা মানুষ বুঝতে পেরেছে। এই পার্টি ছাড়া দেশ এগিয়ে যাবে না। উন্নয়নই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টির মূল মন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশিত - সব কা সাথ, সব কা বিকাশ নীতি নিয়েই কাজ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগে রাজ্যে বিজেপির সভ্য সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ২৪ হাজারের মতো। এরপর তিনি মেম্বারশিপ ড্রাইভের দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ। শুধু সংগঠন করাই নয়, সেবার জন্য সংগঠন করা আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পার্টি কার্যকর্তাদের পার্টি। আমরাও সাধারণ মানুষ। মানুষের জন্যই কাজ করা মূল লক্ষ্য। দলের কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ - মানুষের সুখ দুঃখে, আপদে বিপদে প্রতিনিয়ত পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। 
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, জাতি জনজাতি সকল অংশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে এই সরকার। অতীতে জাতি জনজাতির মধ্যে বিভাজনের রেখা টানা হয়েছিল। কমিউনিস্টরা শুধু বিভাজনের রাজনীতি করে গিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি আসার পর সেই বিভেদের রেখা মুছে দেওয়া হয়েছে। এই সরকার চায় প্রত্যেক মানুষের হিতসাধন করা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই ভাবনা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন তিনি। যে কারণে এক্ট ইস্ট পলিসির বাস্তবায়ন করছেন তিনি। এখন জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রেল যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চল। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে প্রতি ঘরে সুশাসন পৌঁছে দেওয়া। এদিন কমিউনিস্টদের সঙ্গে আঁতাত করার প্রশ্নে কংগ্রেস দলেরও তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। 
এর পাশাপাশি আগামী লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার দুটি আসনে রেকর্ড ভোটে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে তুলে দেওয়ার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। 
জন আশীর্বাদ যাত্রা সভায় এদিন উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা, প্রাক্তন বিধায়ক পরিমল দেববর্মা, ছামনু মন্ডল সভাপতি মোহন লাল চাকমা সহ ভারতীয় জনতা পার্টির জেলা ও মন্ডল স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব। 
সেবাই সংগঠন - প্রধানমন্ত্রীর এই মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে জন আশীর্বাদ যাত্রায় বিরোধী বিভিন্ন দল ত্যাগ করে ৯২ পরিবারের মোট ২৬৯ জন ভোটার এদিন বিজেপিতে যোগদান করেন। বিজেপি পরিবারে নবাগতদের স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে সংগঠনকে শক্তিশালী করার‌ লক্ষ্যে সমর্পণের ভাবনায় কাজ করার জন্য তাদের উৎসাহিত করেন তিনি।
এদিকে বিজেপির ৪৮ করমছড়া মন্ডলের উদ্যোগে মনু টাউন হলে আয়োজিত সংগঠনিক সভায় সম্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এর পাশাপাশি কার্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি। দলের সংগঠনকে আরো কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সেনিয়ে কার্যকর্তাদের গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ