Advertisement

Responsive Advertisement

বিরোধী দলের ১১৯৬ জন ভোটারকে বিজেপিতে বরণ করে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর: ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তাদের দায় দায়িত্ব অনেক। শুধু বুথ সভাপতি কিংবা পৃষ্ঠাপ্রমুখ হওয়া শেষ কথা নয়। মানুষের জন্য কাজ করায় হচ্ছে আসল। সাম্প্রতিক সময়ে বক্সনগর ও ধনপুরে প্রত্যাশার চাইতেও অধিক গুণ ভোটে ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনীত প্রার্থীদের জয় দলের কার্যকর্তাদের দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই শুধু ভোটের সময়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গেলে হবে না। মানুষের সুখে দুঃখে, আপদে বিপদে প্রতিনিয়ত পাশে দাঁড়াতে হবে। 
মঙ্গলবার ৩৪ - রাজনগর মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত সাংগঠনিক এবং যোগদান সভায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই কার্য্যক্রমে ২০৩ পরিবারের প্রায় ৭০০ জন বিরোধী দলের ভোটারকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী।
পরে সভায় উপস্থিত কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি দেশের জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এখন এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ত্রিপুরার প্রতিটি প্রান্তে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয় নিয়ে কোন সংশয় ছিল না। বক্সনগরে ৩০ হাজারের অধিক ভোট এবং ধনপুরে ১৮ হাজারের অধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা। প্রত্যাশার চাইতেও অধিক মাত্রায় ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভোট দিয়েছেন মানুষ। এরমধ্যে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ যেমন ছিলেন ঠিক তেমনি ছিলেন জনজাতি অংশের মানুষ। 
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আগে বিধানসভায় আমাদের আসন ছিল ৩১ প্লাস ১। আর উপনির্বাচনে দুই আসন জয়ের পর এখন হয়েছে ৩৩ প্লাস ১, অর্থাৎ ৩৪টি আসন। মানুষ জনপ্রতিনিধিদের জয়ী করে বিধানসভায় পাঠায় তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজ নিজ বিধানসভা এলাকা এবং সারা রাজ্যের সমস্যা তুলে ধরা। সেই সঙ্গে জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু এই পবিত্র বিধানসভায় আমরা কি দেখেছি? একাংশ বিরোধী সদস্যের টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে হাঁটা, গঙ্গা জল ছিটানো, অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করা, মানদন্ড নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা প্রত্যক্ষ হয়েছে। যেন সার্কাসের মতো অবস্থা। তাই সুস্থ পরিস্থিতি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভারতীয় জনতা পার্টির। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বক্সনগর ও ধনপুরের উপনির্বাচনে কোথাও কোন গণ্ডগোল বা হামলা হুজ্জুতির ঘটনা ঘটে নি। অথচ বিরোধী দল আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও বিরোধীরাও সম্পূর্ন স্বাভাবিক পরিবেশে সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিং করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনও সম্পূর্ন স্বাভাবিক পরিবেশে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু কমিউনিস্টরা যেখানে শাসন করেছে সেখানে উশৃঙ্খলতার বীজ ছড়িয়েছে। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালা এর ব্যতিক্রম নয়। অথচ অন্যান্য রাজ্যগুলিতে কি সুন্দরভাবে নির্বাচন করা হয়। 
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে সুস্থির পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। এই সরকার বাস্তবিক অর্থেই স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সরকার। আইন শৃঙ্খলার দিক থেকেও রাজ্যের স্থান খুবই ভালো জায়গায় রয়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিক থেকে ত্রিপুরার স্থান খুবই ভালো জায়গায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা। প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ আছেন দুর্নীতি করে সরকার চালানোর সাহস কারোর নেই। কারণ তিনি সবদিকেই সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। 
এদিন ফের একবার মাদক কারবারিদের উদ্দেশ্যে কঠোর বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, নেশা কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরা যে দলেরই হোক না কেন কাউকে রেয়াত করা হবে না। নেশার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। এদের কারণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই নেশার মোকাবিলায় সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তাদেরও গুরুদায়িত্ব রয়েছে। আমার বুথ, শক্তিশালী বুথ - এই ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হবে। বুথ সভাপতি বা পৃষ্ঠাপ্রমুখ হলেই কিন্তু দায়িত্ব শেষ হবে না। দায়িত্ব সহকারে মানুষের সমস্যা নিরসনে কাজ করতে হবে। ভালো ফল করতে হলে ভালো শিক্ষকও হতে হয়। 
ত্রিপুরাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তুলতে এগিয়ে আসার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি ত্রিপুরা রাজ্যের বিকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সদর্থক চিন্তাভাবনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাকে হিরা মডেল দিয়েছেন। জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে বিমান পরিষেবার উন্নয়ন, রেল যোগাযোগ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। 
এদিন রাজনগর মন্ডলের উদ্যোগে আয়োজিত সাংগঠনিক এবং যোগদান সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির দক্ষিণ জেলা সভাপতি প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর রায়, বিধায়ক স্বপ্না মজুমদার, মন্ডল সভাপতি রঞ্জিত সরকার সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। 
এদিকে এদিনই ঋষ্যমুখ মন্ডলের ভারতীয় জনতা পার্টির সকল কার্যকর্তা এবং পদাধিকারীদের নিয়ে মতাইয়ের মোহিনী স্মৃতি ভবনে একটি সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কর্মসূচিতে ১৫৭ পরিবারের ৪৯৬ জন ভোটার বিভিন্ন বিরোধী দল ছেড়ে ভারতীয় জনতা পার্টির পতাকা তলে সামিল হয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ