Advertisement

Responsive Advertisement

শিক্ষার সার্বিক বিকাশে শিক্ষকরাই অন্যতম কান্ডারী : মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ৫ সেপ্টেম্বর: শিক্ষার গুণগত মানের উন্নয়নে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই দিশায় কাজ করা হচ্ছে। সঠিক ও গুনগত শিক্ষা দেশকে দিশা দেখায়। সেই শিক্ষার বিকাশে শিক্ষকরাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কান্ডারী। শিক্ষকগণ সমাজের মেরুদন্ড তথা মানুষ গড়ার কারিগর। 
শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ৬২ তম শিক্ষক দিবসের রাজ্য ভিত্তিক মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। রাজ্য স্তরের শিক্ষক দিবস উদযাপন সমারোহে এদিন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সমস্ত শিক্ষানুরাগীদের উদ্দেশ্যে সম্বোধন করেন। 
শিক্ষক দিবসের বিশেষ দিনে সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধকের বক্তব্যে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিক্ষক শিক্ষিকাদের গতানুগতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিকেও বিদ্যালয়ের পাঠদানে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যকে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের কাছে জ্ঞান থাকবে আগামীদিনে পুরো পৃথিবী তাদের মুঠোয় থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রায় ৩৪ বছর পর শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবের সাথে মিল রেখে দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। রাজ্যেও এই শিক্ষা নীতি কার্যকর করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমাজের দূর্বল ও অনগ্রসর অংশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনলাইন ভর্তির প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ - ২৩ অর্থবর্ষে ছাত্রীদের জন্য ৪৪ হাজার ৬০০টি বাই সাইকেল বিতরন করা হয়েছে। এনিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ বাই সাইকেল প্রদান করা হয়েছে। সাইকেল টু গার্লস স্টুডেন্ট প্রকল্পটি ২০২৩ - ২৪ অর্থবর্ষেও চালু রাখা হবে। এজন্য বাজেটে প্রায় ৯ কোটি টাকার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে নতুন একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যেসকল ছাত্রী ভালো ফলাফল করবে তাদের মধ্যে সেরা ১০০ জনকে স্কুটি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এছাড়া সরকারি ৪০০টি স্কুলকে আধুনিকীকরণের জন্য প্রচুর আর্থিক সংস্থান বাজেটে রাখা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়কে দেশ সেবার প্রতি উৎসাহিত করতে ত্রিপুরা অগ্নিবীর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেনারেল স্কুল কলেজে ছাত্রীদের জন্য সকল ধরণের ফি মুকুব করা হয়েছে। দিব্যাঙ্গ পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতে চিফ মিনিস্টার স্পেশাল স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। এতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ৫ হাজার টাকা এবং ডিপ্লোমা স্তরে চার হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি ১১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ন্যাশনাল স্কিম ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল সহায়তা বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আরো জানান, ২০২৩ অর্থবর্ষে পিপিপি মডেলে রাজ্যে আরো দুটি নতুন কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্যের সমস্ত ডিগ্রি কলেজ ও পলিটেকনিক কলেজে ফ্রি ওয়াইফাই চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরজন্য আর্থিক ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার চাইছে ত্রিপুরায় শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে সরকার। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের মেধার কোন অভাব নেই। 
এদিন অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিশেষ অবদানের জন্য ৬২ তম শিক্ষক দিবসে রাজ্যের চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে বিশেষ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এরমধ্যে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ কনক নারায়ণ ভট্টাচার্য ও তাঁর টিমকে "পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মান ২০২৩" প্রদান করা হয়। সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য প্রয়াত নগেন্দ্র জমাতিয়াকে "মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য সম্মান ২০২৩" (মরণোত্তর) সম্মানে সম্মানিত করা হয়। প্রয়াতের হয়ে তাঁর ছেলে ডা: কাহমনুক জমাতিয়ার হাতে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সহিষ্ণু জমাতিয়াকে "মহারাণী তুলসীবাতি সম্মান- ২০২৩" সম্মান প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে প্রখ্যাত সমাজকর্মী ভীষ্ম গুপ্তকে "ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি সম্মান- ২০২৩" সম্মানে সম্মানিত করা হয়। 
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা, বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা শুভাশিস বন্দোপাধ্যায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ