Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার আরো উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ১২ সেপ্টেম্বর: মানব ধর্মের উপর কোন ধর্ম হয় না। ঠিক তেমনি রক্তেরও কোন ধর্ম হয় না। যেকোন ধর্মের রক্ত অপর ধর্মের মানুষ নিতে পারে। মহিলা বা পুরুষের রক্তের মধ্যেও কোন তফাৎ নেই। ১৮ থেকে ৬০ বছর এবং সুস্থ সবল থাকলে ৬৫ বছর পর্যন্ত যে কারোর রক্ত নেওয়া যেতে পারে। আমরা সবাই এক। রক্তের মধ্যেই সেই পরিচয় আমরা দেখতে পাই। রক্তদানের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। 
মঙ্গলবার এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হয়। আর এই দুটো মেডিকেল কলেজের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। রাজ্যে আরো মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে বেসরকারিভাবে বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে আসছেন। তারা জমি সহ বিভিন্ন সহযোগিতা চাইছেন। ত্রিপুরা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সারা দেশে পৌঁছে গেছে। ত্রিপুরাতে স্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে যে কাজ করা সম্ভব হবে সেই বার্তা পৌঁছেছে। তাই শুধু মেডিকেল কলেজ নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্যও বাইরে থেকে অনেকে আসছেন। 
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সম্পর্ক আন্তরিক হতে হবে। মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর সময়ে ডাক্তাররাই শংসাপত্র দিয়ে থাকেন। তবে কেন তাদেরকে হেনস্থা করা হবে? এসব ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়। রাজ্য সরকার চাইছে চিকিৎসা পরিষেবার আরো উন্নয়ন ঘটাতে। এবারের বাজেটেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রচুর অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের মানুষের মধ্যে আয়ুষ্মান কার্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন না, তাদের কথা ভেবে রাজ্য সরকার এবারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা খাতে ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে আরো প্রায় ১০০টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ৯টি সুপার স্পেশালিটি চালু করা হয়েছে। জিবি হাসপাতালের উপর চাপ কমাতে জেলা হাসপাতালগুলির সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি জেলা হাসপাতালে দুর্ঘটনাগ্রস্থ রোগীদের জন্য ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে যা যা করার দরকার সেটা করছে সরকার। এক্ষেত্রে অর্থের কোন সমস্যা হবে না। শুধু কাজ করার ইচ্ছা ও মানসিকতা থাকতে হবে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হবে। রাজ্যে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরিরও চিন্তাভাবনা চলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে পরিকাঠামো শক্তিশালী করতেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে রিসোর্স পার্সনরাও আসছেন। রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যারা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, সুপার স্পেশালিটি করে বাইরে রয়েছেন তারাও সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে রাজ্যে আসতে শুরু করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের যেকোন মেডিকেল কলেজের চাইতে কোন অংশে কম নয় আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ। ডাক্তার, ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের গুণগত মান কোন অংশে কম নয়। এখানে রিসার্চ ওয়ার্ক, সায়েন্টিফিক ওয়ার্ক হচ্ছে এখন। কোভিডের সময়েও জীবন বাজি রেখে রোগীদের সেবা করে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। 
রক্তদানের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রক্তের কোনো ধর্ম নেই। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। একটা সময়ে রক্তের প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ডোনার নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু এখন স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের কারণে সেই সমস্যা নিরসন হয়েছে। তাই স্বেচ্ছা রক্তদানে আরো এগিয়ে আসতে হবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসকদের আরো আন্তরিকভাবে রোগীদের সেবা করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জিবিপি হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তী, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা প্রফেসর এইচ পি শর্মা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ