Advertisement

Responsive Advertisement

নিপুন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ফলপ্রসু হলে 'এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা' গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১১ সেপ্টেম্বর: রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের কাজে কোন ধরণের সমঝোতা করবে না বর্তমান রাজ্য সরকার। শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নে রাজ্য সরকারের পক্ষে যা যা করার প্রয়োজন সেটা করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও। 
সোমবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত সমস্ত জেলায় স্বল্প খরচে শিক্ষাদানের উপকরণ তৈরী বিষয়ক প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী নিপুণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সারা রাজ্যে নিপুন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ফলপ্রসু হলে এক নতুন ত্রিপুরা গড়ে তোলা যাবে। এতে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার স্বপ্নও বাস্তবায়িত হবে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের শিক্ষকদের গুরুদায়িত্ব নিতে হবে। নিপুন প্রকল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন শিক্ষকরা। তারা বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা ও খেলাধুলা মুলক শিক্ষা দানের মাধ্যমে স্কুলগুলিতে শিক্ষা প্রদান করেন। ত্রিপুরায় মেধার কোন অভাব নেই। ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। রাজ্য সরকার ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে। এর পাশাপাশি শিক্ষার উন্নয়নে আরো বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা জানান, ত্রিপুরা সরকার ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন বোর্ডের মধ্যে শিক্ষাগত তারতম্য মেটাতে ২০১৯ - ২০ সালে এনসিইআরটি পাঠক্রম চালু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে রাজ্যে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। এবার জি - ২০ শীর্ষ সামিটেও নালন্দা, তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা বোর্ডের অধীনে স্কুলগুলিতে যে পরীক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার পরিবর্তন হয়েছে। বছর বাঁচাও প্রকল্প চালু হয়েছে। স্কুলগুলির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে শিক্ষা দপ্তর থেকে বন্দে ভারত নামে শিক্ষামূলক চ্যানেল চালু করা হয়েছে। ২০২০ তে রাজ্য সরকার ত্রিপুরা সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ এক্সাম ও ম্যাথ ট্যালেন্ট সার্চ এক্সাম চালু করেছে। প্রতি বছর রাজ্য সরকার ৩০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে জেইই/ এনইইটি পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য জাতীয় মানের কোচিংয়ে পড়ার জন্য আর্থিক সহায়তার বন্দোবস্ত করেছে। চারটি নতুন ডায়েট কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের চলতি প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ককবরক, চাকমা, মণিপুরী, হালাম, মগ ইত্যাদি ৮টি জনজাতি গোষ্ঠীর জন্য পাঠ্যবই চালু করা হয়েছে। জেনারেল ডিগ্রি কলেজগুলিতে ছাত্রীদের সমস্ত ফি মুকুব করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ছাত্রীকে বিনামূল্যে বাই সাইকেল বিতরন করা হয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে ১৮০টি স্কুলে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অধীন বিদ্যাসেতু প্রকল্পে ৮ হাজার ৮৮৩জন ছাত্রছাত্রী শিক্ষার সুফল গ্রহণ করছে। সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে ৭৫২টি স্কুলে স্মার্ট ক্লাশ চালু করা হয়েছে। আরো ৬০টি স্মার্ট ক্লাশ চালু করা হবে। ৬০৪টি স্কুলে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (ICT) চালু করা হয়েছে। আরো ২৯৪টি স্কুলে এই প্রকল্প চালু করা হবে। ১০৬টি স্কুলে থিনকারিং ল্যাবরেটরি স্থাপিত হয়েছে। আরো ১০০টি স্কুলে স্থাপন করা হবে। এছাড়া প্রত্যেকটি ব্লকে একটি করে মডেল স্কুল স্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটে বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে। সমাজের দূর্বল ও অনগ্রসর শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ভর্তির আবেদনের জন্য ওয়েব পোর্টাল খোলা হয়েছে। 
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের আরো ৪০০ (400)টি সরকারি স্কুলকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আগামী ৫ বছরে ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। এজন্য বাজেটে আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। যুব সম্প্রদায়কে দেশ সেবায় উৎসাহিত করতে ত্রিপুরা অগ্নিবীর কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের ১১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলে বৃত্তিমুলক পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, যোগা, মাশরুম কাল্টিভেশন, মেডিসিন্যাল প্ল্যান্ট ইত্যাদি রয়েছে। এই দক্ষতা উন্নয়নের পাঠ্যক্রম আগামীতে ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেবে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পিপিপি মডেলে দুটি নতুন কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি জিরানিয়ার আইন কলেজ এবং অপরটি কাকড়াবনের জেনারেল ডিগ্রি কলেজ। এছাড়া বেসরকারিভাবে আরো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজ্য সরকার চাইছে ত্রিপুরায় একটি এডুকেশন হাব গড়ে তোলার। 
এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, এসসিইআরটি'র অধিকর্তা এন সি শর্মা, বুনিয়াদি শিক্ষা অধিকর্তা শুভাশিস বন্দোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা। উদ্বোধনী পর্বের পর ৮টি জেলার স্কুলগুলির মধ্যে স্বল্প খরচে শিক্ষা দানের উপকরণ নির্মাণ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ