আগরতলা, ৩০ অক্টোবর: পশ্চিমবাংলার পাশাপাশি এবার ত্রিপুরা সঙ্গে ও বাংলাদেশের সরাসরি ট্রেন পরিষেবা চালু হলো। সোমবার বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি পণ্যবাহী ট্রেন আগরতলার নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে প্রথমবারের মতো আসে।
সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের দিকে থাকতেই বিএসএফ জওয়ানরা ট্রেনটি তল্লাশি চালান তারপর সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন টিকেট ত্রিপুরায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ধীরগতিতে ট্রেনটি এগিয়ে আসে এবং নিশ্চিন্তপুর স্টেশনের এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে ট্রেনটিকে ঘিরে ধরেছেন কয়েকশত স্থানীয় জনতা। স্টেশনে এসে ট্রেনটি দাঁড়ানো সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ মোবাইল ফোন দিয়ে ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তুলেন আবার কেউ ভিডিও কলে দূরে থাকা আত্মীয় পরিজন এবং বন্ধু-বান্ধবদেরকে দেখাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ট্রেন এসে পৌঁছেছে।
ট্রেন থেকে একে একে নেমে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ে আধিকারিকরা। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব জোনের পরিচালক আব্দুর রহিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মোট পাঁচটি পণ্যবাহী খালি বগি নিয়ে তাদের ৬ জনের একটি টিম এসেছে। এদিন ট্রেনটি আগরতলায় আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হলো। এর আগে পশ্চিমাঞ্চলে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগ এবং চিকিৎসা ক্ষেত্র আরো উন্নতি হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। ট্রেনটি বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ছেড়েছে এবং মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার চালিয়ে আসা হয়েছে তাই অনেক ধীরগতিতে চালানো হয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে চললে আরো অনেক কম সময়েই পৌঁছে যাবে বলেও জানা তিনি।
অপরদিকে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গুনিদ্র চৌধুরী সংবাদ মধ্যকে বলেন, এদিনই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশর গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে পণ্যবাহী ট্রেন কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসে পৌঁছে, প্রয়োজনীয় সরকারি কাজ সেরে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাবে। মোট ছয় জনের একটি টিম বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে জানান। তিনিও বললেন দীর্ঘদিন পর অবশেষে এই রুটে মিটার গেজ ট্রেন পরিষেবা চালু করা সম্ভব হলো। কারণ বাংলাদেশের এই অঞ্চলে মিটার গেজ ট্রেন চলছে। প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য বাহির ট্রেন নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত আসবে। পরবর্তী সময়ে যাত্রী ট্রেনের কথা পরিকল্পনা করা হবে। এক নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই পথে আনুষ্ঠানিক ট্রেন পরিষেবা চালু করার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারত সরকার ইতিমধ্যে নিশ্চিন্তপুর স্টেশনটিকে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম রেলওয়ে ইমিগ্রেশন স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ৬জন রেলওয়ে কর্মকর্তার ইমিগ্রেশন এর মধ্য দিয়ে এই ইমিগ্রেশন সেন্টারের কার্যক্রমের সূচনা হলো। সব মিলিয়ে এই মতে নিয়মিত ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়ার সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তবে এ রুটে যাত্রী পরিবাহী ট্রেন এবং ভারতীয় ট্রেন চালাতে আরো অনেক সময় লাগবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কারণ আগরতলার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে সংযুক্তকারী ট্রেন রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে। এর মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলিভেটেড করিডোর অর্থাৎ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে নির্মাণ করা হবে। এই কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাছাড়া বাংলাদেশের ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রেনলাইন একোনোমিটার গেজ। যদিও এই ট্রেন লাইনকে ব্রডগেজে উন্নীত করার কাজ চলছে। যতদিন না ব্রডগেজে উন্নীত করা যাচ্ছে ততদিন ভারতীয় ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না কারণ ভারতীয় ট্রেন পুরোটাই ব্রড গেজে। তবে লাইনটিকে দ্রুত ব্রডগেজ এ উন্নীত করার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ