আগরতলা, ১০ অক্টোবর, ২০২৩: বিশ্ববিদ্যালয় হল ভবিষ্যতের গবেষণাগার। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ভাবতে পারি না। তাই গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের মধ্যে থাকা উচিত। আজ ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহারাজা বীরবিক্রম অডিটোরিয়ামে রূপান্তরমূলক ও স্থিতিশীল সমাজের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা' শীর্ষক তিনদিন ব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেল এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি ও বিস্তারের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের নাগরিকদের জীবন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দক্ষ নেতৃত্বে ভারত সফলভাবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ্যক্রমে বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের সম্ভাব্য উপায়গুলির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। স্থিতিশীল জীবনযাপনের লক্ষ্যে উদ্ভাবনী ও সম্ভাব্য উপায়গুলি সম্পর্কে শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তুলতে হবে। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০২০ তে ভারতীয় পরম্পরাগত জ্ঞানের গুণাবলীর উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থিতিশীল জীবনযাপনের মূল্যবোধের কথা আমাদের পরম্পরায় রয়েছে। আমাদের সুপ্রাচীন জ্ঞান ভান্ডারে নিহিত জীবনের মূল্যবোধের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকার চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে ভারত তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বকে পথ দেখাতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজাগুলি প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। সেই সাথে রয়েছে অসংখ্য পরিবেশগত হটস্পট। তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক, জাতিগত, পরিবেশগত এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর দৃষ্টি রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'ভোক্যাল ফর লোক্যাল' নীতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্রী স্থিতিশীল মূল্যবোধের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূমিকা নিয়ে গবেষণার জন্য ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের ঐতিহ্যগত সমৃদ্ধ প্রাচীন আয়ুর্বেদ আমাদের বনের কোলে বেড়ে উঠেছে। ত্রিপুরায় অনেক বনাঞ্চল রয়েছে। এই বনাঞ্চলে মূল্যবান অনেক ভেষজ উদ্ভিদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই হয়তো একদিন এই মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে বহু বিশ্ব সম্মেলনে ভারত তথাকথিত উন্নত দেশগুলির দ্বারা নির্দেশিত হত। যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল ফোরামে আমাদের আওয়াজ তোলা খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের মর্যাদা ক্রমশ বাড়ছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদৃষ্টি অবিরাম প্রচেষ্টা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের জন্য। এখন ভারত যেকোনও গ্লোবাল ফোরামে গর্বিত ও স্বাধীনভাবে তার মতামত ব্যক্ত করতে পারছে। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গঙ্গাপ্রসাদ প্রসেইন বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী মানসিকতা গড়ে তোলা হচ্ছে। ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেল গঠিত হয়েছে এবং সেখানে বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই সম্মেলন ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরী করবে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন ব্যাঙ্গালুরুর অশোকা ট্রাস্ট ফর রিসার্চ ইন ইকোলজি এন্ড এনভাইরনমেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর একলব্য শর্মা, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন প্রফেসর বাদল কুমার দত্ত, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ডিন প্রফেসর শ্যামল দাস, সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. সপ্তর্ষি মিত্র। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের ডিরেক্টর প্রফেসর অজয় কৃষ্ণ সাহা। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. দীপক শর্মা।
0 মন্তব্যসমূহ