আগরতলা, ৪ অক্টোবর : জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শক্তির চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলছে। বর্তমানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই শক্তি অপরিহার্য। ফলে শক্তির ব্যাপকতা বর্তমানে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বুধবার হোটেল পোলো টাওয়ারে 'ত্রিপুরার শক্তি পরিবর্তন' শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা মানিক সাহা একথা বলেন। বিদ্যুৎ দপ্তর ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশের শক্তি উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্য পুরণের জন্য রাজ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকে উন্নত করার লক্ষ্যে এই কর্মশালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি আগামী প্রজন্মের জন্য নির্মল পরিবেশ তৈরিতে এবং সম্পদ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পরিবেশকে নির্মল রেখে আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশগুলিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাদের দেশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রচার ও প্রসারের জন্য গুরুত্ব দিয়েছে। এলক্ষ্যে ৫০০ গিগাওয়াটের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণ শক্তি বৃদ্ধি করার অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে বলেন, রাজ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকেন্দ্র স্থাপনে সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। টেডা রাজ্যে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করেছে। ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড রুখিয়া এবং বড়মুড়ায় ৬৩ এবং ৪২ মেগাওয়াট ওসিজিটি প্রকল্পের পরিবর্তে ১২০ এবং ৮৪ মেগাওয়াট সিসিজিটি প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নিয়েছে। ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজও শুরু করে দিয়েছে। এছাড়াও আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রেডা রাজ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এই লক্ষ্যে সোলার গ্রিড পাওয়ার, ফ্লোটিং সোলার, ক্যানেল সোলার, রুফ টপ সোলার, মাইক্রো গ্রিড সোলার ইত্যাদি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ডম্বুর জলাশয়ে ১৩০ মেগাওয়াট ফ্লোটিং সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য টেডা ইতিমধ্যেই এনটিপিসি'র সাথে মৌ স্বাক্ষর করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বর্তমানে দেশের শক্তি পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার গ্রাম শহরে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার একটি অনুকূল শিল্পনীতি রয়েছে। একে ভিত্তি করেই রাজ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে দেশ বিদেশের উদ্যোগীদের প্রতি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, রাজ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উন্নয়নে এই ধরণের কর্মশালা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। রাজ্য সরকারও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট পাহাড়ী রাজ্য হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের পথে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিদ্যুতের কারণে রাজ্যে বর্তমানে শিল্প স্থাপনে আদর্শ পরিবেশ গড়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সিনিয়র এনার্জি স্পেশালিস্ট জেমস কোলানথারাজ এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং।
0 মন্তব্যসমূহ