আগরতলা, ২৯ নভেম্বর: ন্যাশনাল মিশন অন এডিবেল ওয়েল ওয়েল পাম প্রকল্পে ত্রিপুরায় ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৭ হাজার হেক্টর জমি পাম ওয়েল চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আজ সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতনলাল নাথ এই সংবাদ জানান। তিনি জানান, রাজ্যের কৃষকদের আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের আয় আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার পাম ওয়েল চাষে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতে পাম ওয়েল সম্ভাবনাময় একটি নতুন ফসল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় বিশ্বের ১০ শতাংশেরও বেশি পাম ওয়েলের উৎপাদন হয়। কৃষিমন্ত্রী জানান, ভারত ২০২০-২১ সালে প্রায় ১৩৩.৫২ লক্ষ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করেছে যার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। সমস্ত আমদানিকৃত ভোজ্য তেলের মধ্যে পাম ওয়েলের অংশ প্রায় ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ভোজ্য তেলে আত্মনির্ভরতার পাশাপাশি আমদানি কমাতে ভারত সরকার পাম ওয়েল চাষে গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে পাম ওয়েল চাষ হচ্ছে ৩৮,৯৯২ হেক্টরে। ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, মাটি ইত্যাদি পাম ওয়েল চাষের জন্য অনুকূল। কৃষি মন্ত্রী জানান, ২০২০ সালে আইসিএআর-আইআইওপিআর পুনঃমূল্যায়নের কমিটি ডিজিটাল ম্যাপিং এর মাধ্যমে রাজ্যে পাম ওয়েলের চাষযোগ্য এলাকা সম্প্রসারণের জন্য ১,৪৬,৩৬৪ হেক্টর জমি চিহ্নিত করেছিল।
সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী জানান, ন্যাশনাল মিশন অন এডিবেল ওয়েল পাম ওয়েল প্রকল্প বাস্তবায়ণে রাজ্যের কৃষি দপ্তরের সাথে দেশের দুটি কৃষি উৎপাদক সংস্থা যথাক্রমে গোদরেজ এগ্রোভেট লিমিটেড এবং পতঞ্জলি ফুড প্রাইভেট লিমিটেড মৌ স্বাক্ষর করেছে। ইতিমধ্যেই গোদরেজ এগ্রোভেট লিমিটেড ধলাই জেলার নালকাটাতে সরকারি বাগানে ৬৫ হেক্টর এলাকায় একটি নার্সারি স্থাপন করেছে যেখানে বিদেশী জাতের ১,৫০,০০০টি এবং ৬০০০টি দেশীয় পাম ওয়েলের চারা উৎপাদন করেছে। গোদরেজ এগ্রোভেট লিমিটেড এই বছর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আনা পাম ওয়েলের চারা ব্যবহার করে কৃষকদের মাধ্যমে রাজ্যে ৫২.০১ হেক্টর জমিতে পাম ওয়েলের চারা রোপণ করেছে। পতঞ্জলি ফুড প্রাইভেট লিমিটেডও এই বছর মোট ৪৩১ হেক্টর জমিতে পাম ওয়েলের চারা রোপণ করেছে। রাজ্যে মোট ৫৬৩৫ হেক্টর পাম ওয়েল চাষের এলাকা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, রাজ্যে কৃষি বিভাগের ১৮ জন অফিসারকে ইতিমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে পাম ওয়েলের উপর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত রাজ্যের ২,১২৩ জন কৃষককে পাম ওয়েল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১,০৭৬ জন কৃষক ইতিমধ্যেই পাম ওয়েল চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি জানান, 2021 সালের নভেম্বরে ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্পনসর্ড স্কিম ন্যাশনাল মিশন অন এডিবেল ওয়েল-ওয়েল পাম প্রকল্পটি চালু করা হয়। এই প্রকল্পে পাম ওয়েল চাষিদের জন্য বিভিন্ন সহায়তাগুলি নিয়েও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি আরও জানান, ভারত সরকার ১লা নভেম্বর ২০২১ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০৩৭ সাল পর্যন্ত পাম ওয়েল চাষিদের জন্য তাজা ফলের গুচ্ছের মূল্যের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এই বছর নিশ্চিত মূল্য প্রতি কেজিতে ১৩:৩৪ টাকা। চার বছর পর থেকে পাম ওয়েল থেকে উৎপাদন শুরু হয় এবং ৮ বছর পর থেকে উৎপাদনের নিরিখে প্রতি হেক্টরে বছরে ৩ লক্ষ টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। পাম ওয়েল গাছের অর্থনৈতিক আয়ুষকাল ৩০ বছর। সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্যান পালন দপ্তরের অধিকর্তা ফনিভূষণ জমাতিয়া জানান, উদ্যান পালন দপ্তর থেকে কৃষকদের সুবিধার্থে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে। আগ্রহী কৃষকরা এই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবে।
0 মন্তব্যসমূহ